ভারতীয় সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ: একটি সম্পূর্ণ অধ্যয়ন সহায়িকা

 

ভারতীয় সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ: একটি সম্পূর্ণ অধ্যয়ন সহায়িকা

এই অধ্যয়ন সহায়িকাটি ভারতীয় সংবিধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলির একটি বিশদ পর্যালোচনা প্রদানের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এখানে একটি কুইজ, তার উত্তরমালা, প্রবন্ধমূলক প্রশ্ন এবং একটি বিস্তৃত পরিভাষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের সংবিধানের জটিল বিষয়গুলি বুঝতে এবং মনে রাখতে সহায়তা করবে।

--------------------------------------------------------------------------------

কুইজ

নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির প্রতিটির ২-৩টি বাক্যে উত্তর দিন।

১. অনুচ্ছেদ ৩ অনুযায়ী, একটি নতুন রাজ্য গঠন বা বিদ্যমান রাজ্যের সীমানা পরিবর্তন করার জন্য তিনটি প্রধান পদক্ষেপ কী কী?

২. ভারতীয় সংবিধানের কোন অংশে নাগরিকতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এটি কোন কোন অনুচ্ছেদকে অন্তর্ভুক্ত করে?

৩. অনুচ্ছেদ ২১ এবং ২১ক দ্বারা প্রদত্ত দুটি মৌলিক অধিকার কী কী?

৪. ডঃ বি. আর. আম্বেদকর কোন অনুচ্ছেদকে 'সংবিধানের আত্মা' বলে অভিহিত করেছেন এবং কেন?

৫. রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতির (DPSP) দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন যা অনুচ্ছেদ ৩৭-এ বর্ণিত আছে।

৬. অনুচ্ছেদ ৭২ এবং ১৬১-এর অধীনে যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার মধ্যে মূল পার্থক্য কী?

৭. অনুচ্ছেদ ১০৮ অনুযায়ী সংসদের যৌথ অধিবেশন কে ডাকতে পারেন এবং কখন এটি ডাকা হয়?

৮. ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাগাণনিক (CAG) পদের কথা কোন অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে এবং তার প্রধান কাজ কী?

৯. ৩ ধরনের জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করুন যা ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত আছে এবং তাদের নিজ নিজ অনুচ্ছেদগুলি কী কী?

১০. সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়াটি কোন অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এই ধারণাটি কোন দেশের সংবিধান থেকে নেওয়া হয়েছে?

--------------------------------------------------------------------------------

উত্তরমালা

১. অনুচ্ছেদ ৩ অনুযায়ী তিনটি প্রধান পদক্ষেপ হলো - নতুন রাজ্য নির্মাণ করা, রাজ্যগুলির সীমানা বাড়ানো বা কমানো, এবং রাজ্যগুলির নাম পরিবর্তন করা। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড এবং তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যগুলি এই অনুচ্ছেদের অধীনে গঠিত হয়েছে।

২. ভারতীয় সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে (ভাগ ২) নাগরিকতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এটি অনুচ্ছেদ ৫ থেকে ১১ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করে, যেখানে সংবিধানের প্রারম্ভে নাগরিকতা, পাকিস্তান থেকে আসা বা সেখানে যাওয়া ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব এবং নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে সংসদের ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় বর্ণিত আছে।

৩. অনুচ্ছেদ ২১ প্রত্যেক ব্যক্তিকে প্রাণ ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার বা মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার প্রদান করে, যার মধ্যে গোপনীয়তার অধিকারও অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, ৮৬তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যুক্ত হওয়া অনুচ্ছেদ ২১ক, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে।

৪. ডঃ বি. আর. আম্বেদকর অনুচ্ছেদ ৩২-কে 'সংবিধানের আত্মা' বলে অভিহিত করেছেন কারণ এটি সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার প্রদান করে। যদি কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তবে তিনি এই অনুচ্ছেদের অধীনে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন, যা পাঁচ ধরনের রিট জারি করে অধিকার রক্ষা করে।

৫. অনুচ্ছেদ ৩৭ অনুযায়ী, DPSP-এর দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো - এগুলি আদালত দ্বারা বলবৎযোগ্য নয়, অর্থাৎ এগুলি लागू না হলে কেউ আদালতে যেতে পারে না। দ্বিতীয়ত, যদিও এগুলি বলবৎযোগ্য নয়, তবে দেশের শাসনের জন্য এগুলি মৌলিক এবং আইন প্রণয়নের সময় রাষ্ট্র এগুলি প্রয়োগ করতে দায়বদ্ধ থাকবে।

৬. অনুচ্ছেদ ৭২ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির মৃত্যুদণ্ডসহ যেকোনো দণ্ড সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে, অনুচ্ছেদ ১৬১ অনুযায়ী রাজ্যপালের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা থাকলেও, তিনি মৃত্যুদণ্ড ক্ষমা করতে পারেন না, তবে দণ্ড কমাতে বা স্থগিত করতে পারেন।

৭. অনুচ্ছেদ ১০৮ অনুযায়ী, সংসদের যৌথ অধিবেশন ডাকার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। যখন কোনো সাধারণ বিল নিয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং বিলটি পাশ করা সম্ভব হয় না, তখন রাষ্ট্রপতি এই যৌথ অধিবেশন ডাকতে পারেন।

৮. ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাগাণনিক (CAG) পদের কথা অনুচ্ছেদ ১৪৮-এ বলা হয়েছে। তার প্রধান কাজ হলো কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমস্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করা এবং তা নিশ্চিত করা যে সমস্ত লেনদেন আইনসম্মতভাবে হয়েছে।

৯. সংবিধানে ৩ ধরনের জরুরি অবস্থা রয়েছে: ১) জাতীয় জরুরি অবস্থা (অনুচ্ছেদ ৩৫২), যা যুদ্ধ বা বহিরাগত আগ্রাসনের কারণে জারি করা হয়। ২) রাষ্ট্রপতি শাসন (অনুচ্ছেদ ৩৫৬), যা কোনো রাজ্যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে জারি করা হয়। ৩) আর্থিক জরুরি অবস্থা (অনুচ্ছেদ ৩৬০), যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হলে জারি করা হয়।

১০. সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়াটি ভাগ ২০-এর অনুচ্ছেদ ৩৬৮-এ উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধারণাটি দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধান থেকে নেওয়া হয়েছে, যা সংসদকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সংবিধানের যেকোনো অংশ সংশোধন করার ক্ষমতা প্রদান করে।

--------------------------------------------------------------------------------

প্রবন্ধমূলক প্রশ্ন

১. ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলির (ভাগ ৩) গুরুত্ব আলোচনা করুন এবং উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন কীভাবে অনুচ্ছেদ ৩২ এই অধিকারগুলিকে সুরক্ষিত করে।

২. রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি (DPSP) এবং মৌলিক অধিকারের মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য বিশ্লেষণ করুন। দেশের জন্য একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে DPSP-এর ভূমিকা কী?

৩. ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোতে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের সাংবিধানিক ভূমিকা এবং ক্ষমতার তুলনা করুন। তাদের নিয়োগ, কার্যকাল এবং কার্যনির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলি কী কী?

৪. কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আইনী ক্ষমতার বিভাজন কীভাবে সম্পন্ন হয়? অনুচ্ছেদ ২৪৬-এ উল্লিখিত তিনটি তালিকার (সংঘ তালিকা, রাজ্য তালিকা এবং সমবর্তী তালিকা) বিশদ বিবরণ দিন এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে সংসদ কীভাবে রাজ্য তালিকার বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে তা ব্যাখ্যা করুন।

৫. ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত বিভিন্ন ধরণের জরুরি অবস্থার (অনুচ্ছেদ ৩৫২, ৩৫৬, এবং ৩৬০) বিধানগুলি ব্যাখ্যা করুন। এই বিধানগুলি জারির কারণ কী এবং জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় মৌলিক অধিকারগুলির উপর এর কী প্রভাব পড়ে?

--------------------------------------------------------------------------------

পরিভাষা

পরিভাষা

সংজ্ঞা

অনুচ্ছেদ (Article)

সংবিধানের একটি নির্দিষ্ট ধারা বা নিয়ম।

ভাগ (Part)

সংবিধানের একটি অধ্যায়, যেখানে সম্পর্কিত অনুচ্ছেদগুলি একত্রিত থাকে।

মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights)

সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত নাগরিকদের সেইসব অধিকার যা তাদের মর্যাদা ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য এবং আদালত দ্বারা সুরক্ষিত।

নাগরিকতা (Citizenship)

কোনো ব্যক্তির একটি দেশের আইনগত সদস্যপদ, যা তাকে নির্দিষ্ট অধিকার ও কর্তব্য প্রদান করে।

রিট (Writ)

আদালত কর্তৃক জারি করা একটি আনুষ্ঠানিক লিখিত আদেশ, যা কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দিষ্ট কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। (যেমন - বন্দী প্রত্যকষীকরণ, পরমাদেশ)।

রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি (DPSP)

সংবিধানের নির্দেশিকা যা রাষ্ট্রকে আইন ও নীতি প্রণয়নের সময় অনুসরণ করতে উৎসাহিত করে, যদিও এগুলি আইনত বাধ্যতামূলক নয়।

সংসদ (Parliament)

ভারতের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা, যা রাষ্ট্রপতি, লোকসভা এবং রাজ্যসভা নিয়ে গঠিত।

বিধানমণ্ডল (State Legislature)

রাজ্যের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা, যা রাজ্যপাল এবং এক বা দুটি কক্ষ (বিধানসভা ও বিধান পরিষদ) নিয়ে গঠিত।

যৌথ অধিবেশন (Joint Sitting)

কোনো বিল নিয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে মতবিরোধ হলে তা সমাধান করার জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহূত উভয় কক্ষের একটি সম্মিলিত বৈঠক।

অধ্যদেশ (Ordinance)

যখন সংসদের অধিবেশন চলে না, তখন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারি করা একটি অস্থায়ী আইন যা সংসদের আইনের মতোই ক্ষমতা রাখে।

নিয়ন্ত্রক ও মহাগাণনিক (CAG)

ভারতের সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষা করে।

মহাধিবক্তা (Advocate-General)

রাজ্যের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা, যিনি রাজ্য সরকারকে আইনি পরামর্শ দেন।

মহাভিয়োগ (Impeachment)

রাষ্ট্রপতিকে তার পদ থেকে অপসারণের জন্য সংসদে পরিচালিত একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া।

সংবিধান সংশোধন (Constitutional Amendment)

সংবিধানের কোনো বিধান পরিবর্তন, সংযোজন বা বাতিল করার প্রক্রিয়া।

জরুরি অবস্থা (Emergency)

যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ अशांति বা আর্থিক সংকটের মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেশের স্বাভাবিক সাংবিধানিক কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য রাষ্ট্রপতির ঘোষণা।

একক संक्रमणीय ভোট (Single Transferable Vote)

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের একটি পদ্ধতি, যেখানে ভোটাররা প্রার্থীদের পছন্দের ক্রমানুসারে ভোট দেন।

অস্পৃশ্যতা (Untouchability)

জাতিগত বিভেদের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে অচ্ছুৎ বা অপবিত্র মনে করার প্রথা, যা অনুচ্ছেদ ১৭ দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

Preposition নিয়ে আর ভয় নয়! জেনে নিন ৪টি অবাক করা কৌশল যা আপনার ধারণা বদলে দেবে

 

Preposition নিয়ে আর ভয় নয়! জেনে নিন ৪টি অবাক করা কৌশল যা আপনার ধারণা বদলে দেবে

১.০ ভূমিকা: Preposition-এর ধাঁধা

ইংরেজি শিখতে গিয়ে Preposition নিয়ে দ্বিধায় পড়েননি, এমন বাঙালি শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া কঠিন। In, On, At, For, With—এই ছোট ছোট শব্দগুলো কখন, কোথায়, কেন বসবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অনেক সময় মনে হয়, এগুলোর কোনো নিয়ম নেই এবং কেবল মুখস্থ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

কিন্তু সত্যিটা হলো, Preposition ব্যবহারের পেছনেও বেশ কিছু চমকপ্রদ প্যাটার্ন বা নিয়ম লুকিয়ে আছে। আজ আমরা আপনাকে Preposition শেখার এমন কিছু কৌশল বা মানসিক মডেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব, যা আপনাকে এই বিষয়টি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে সাহায্য করবে। চলুন, সেই অবাক করা কৌশলগুলো জেনে নেওয়া যাক।

২.০ কৌশল ১: এক শব্দ, নানা রূপ: একটি Preposition-এর একাধিক অর্থ

Preposition শেখার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো, একই শব্দের বিভিন্ন অর্থ থাকতে পারে। একটি নির্দিষ্ট Preposition বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হলো 'At'

যেমন, 'At' preposition-টি ব্যবহার হতে পারে:

  • সময় বোঝাতে (e.g., at 5 pm)
  • স্থান বোঝাতে (e.g., at home)
  • মূল্য বোঝাতে (e.g., at Tk 100)
  • কোনো কিছুর দিকে বা লক্ষ্য বোঝাতে (e.g., look at the board)

নিচের উদাহরণটি দেখুন:

Example: He came at 3 pm. He looked at me.

এখানে প্রথম বাক্যে 'at' সময় নির্দেশ করছে, আর দ্বিতীয় বাক্যে এটি 'দিকে' বা লক্ষ্য নির্দেশ করছে। তাই, বিচ্ছিন্নভাবে নিয়ম মুখস্থ না করে, একটি Preposition-এর সম্ভাব্য সব অর্থকে একসাথে গ্রুপ করে শিখলে তা মনে রাখা অনেক বেশি সহজ হয়।

৩.০ কৌশল ২: আপনার পরিচিত 'বিভক্তি'-র মধ্যেই লুকিয়ে আছে Preposition-এর রহস্য

বাংলাভাষীদের জন্য এটি সম্ভবত Preposition শেখার সবচেয়ে শক্তিশালী কৌশল বা আপনার "সিক্রেট সুপারপাওয়ার"। আমরা বাংলা ব্যাকরণে বিভক্তি পড়েছি, এবং অবাক করার মতো বিষয় হলো, অনেক ইংরেজি Preposition-এর সাথে বাংলা বিভক্তির সরাসরি মিল রয়েছে। এই সংযোগটি বুঝতে পারলে সঠিক Preposition বাছাই করা অনেক সহজ হয়ে যায়।

আসুন, কিছু সাধারণ মিল দেখে নিই:

  • প্রথমা বিভক্তি (০): এর জন্য সাধারণত কোনো Preposition বসে না।
  • ২য়া বিভক্তি (কে/রে/প্রতি): এর জন্য To ব্যবহৃত হয়।
  • ৩য়া বিভক্তি (দ্বারা/দিয়া/কর্তৃক): এর জন্য By, With ব্যবহৃত হয়।
  • ৪র্থী বিভক্তি (কে/রে/জন্য): এর জন্য For ব্যবহৃত হয়।
  • ৫মী বিভক্তি (হতে/থেকে/চেয়ে): এর জন্য From ব্যবহৃত হয়।
  • ৬ষ্ঠী বিভক্তি (র/এর): এর জন্য Of ব্যবহৃত হয়।
  • ৭মী বিভক্তি (এ/য়/তে): এর জন্য সাধারণত At, In, On ব্যবহৃত হয়।

এখন থেকে, যখনই দ্বিধায় পড়বেন, ধারণাটিকে মনে মনে বাংলায় অনুবাদ করে বিভক্তিটি শনাক্ত করুন। এটিই আপনাকে সঠিক ইংরেজি Preposition খুঁজে পেতে পথ দেখাবে।

৪.০ কৌশল ৩: অবাক করা ‘Against’: যখন এর অর্থ ‘বিরুদ্ধে’ নয়

কিছু Preposition-এর এমন কিছু ব্যবহার আছে যা আমাদের সাধারণ ধারণার বাইরে। এর একটি চমৎকার উদাহরণ হলো 'Against'

'Against' শব্দটি শুনলেই আমাদের মাথায় প্রথম যে অর্থটি আসে তা হলো 'বিরুদ্ধে' (in opposition)। কিন্তু এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার আছে, যা হলো কোনো কিছুতে হেলান দিয়ে বা ঘেঁষে থাকা বোঝাতে। এক্ষেত্রে এর বাংলা অর্থ দাঁড়ায় 'পাশে' বা 'ঘেঁষে'।

উদাহরণস্বরূপ, এই বাক্য দুটি দেখুন:

Example 1: He is against me. Example 2: He kept the bag against the wall.

দেখুন, একই শব্দ ‘against’ প্রথম বাক্যে 'বিরুদ্ধে' এবং দ্বিতীয় বাক্যে 'ঘেঁষে' অর্থ প্রকাশ করছে। এ কারণেই প্রাসঙ্গিকভাবে শেখা এত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি শব্দের সরাসরি অনুবাদে নির্ভর না করে তার contextual ব্যবহারগুলোও শিখতে হবে।

৫.০ কৌশল ৪: অবস্থান এবং গতি: In বনাম Into-র সূক্ষ্ম পার্থক্য

অনেক সময় প্রায় একই রকম দেখতে বা শুনতে Preposition-গুলো আমাদের দ্বিধায় ফেলে দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ একটি জোড়া হলো 'In' এবং 'Into'

এদের মধ্যে মূল পার্থক্যটি হলো অবস্থান এবং গতির ধারণা।

  • In সাধারণত একটি স্থির অবস্থা বা অবস্থান (static position) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, কোনো কিছু আগে থেকেই কোনো কিছুর ভেতরে আছে।
  • Into সাধারণত গতি, প্রবেশ বা অবস্থার পরিবর্তন (movement, entry, or change of state) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, কোনো কিছু বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশ করছে বা এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত হচ্ছে।

নিচের উদাহরণ দুটি দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে:

  • In (অবস্থান): He lives in Dhaka. (তিনি ঢাকার ভেতরে গতিশীল নন; তার অবস্থান শহরের মধ্যে স্থির।)
  • Into (গতি): He burst into tears. (এটি অবস্থার পরিবর্তন বোঝাচ্ছে, কান্না না করার অবস্থা থেকে কান্না করার অবস্থায় রূপান্তর—যা এক ধরনের গতি।)

এই 'অবস্থান বনাম গতি'র ধারণাটি মনে রাখলে শুধু In/Into নয়, আরও অনেক Preposition-এর জোড়ার মধ্যে পার্থক্য করা সহজ হয়ে যায়।

৬.০ উপসংহার: একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

আজকের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, ইংরেজি Preposition কেবল মুখস্থ করার বিষয় নয়, বরং এটি একটি যুক্তিনির্ভর সিস্টেম যার নিজস্ব প্যাটার্ন রয়েছে। 'At'-এর মতো একটি শব্দের বিভিন্ন অর্থকে একসাথে বোঝা, আপনার পরিচিত বিভক্তি-কে গাইড হিসেবে ব্যবহার করা, 'Against'-এর মতো শব্দের অবাক করা ব্যবহার জানা, এবং In/Into-র মতো জোড়ার মধ্যে 'অবস্থান বনাম গতি'-র প্যাটার্নটি চেনা—এই কৌশলগুলোর মাধ্যমে আপনি আর মুখস্থ করছেন না, বরং একটি সিস্টেম শিখছেন।

Preposition শেখার এই নতুন কৌশলগুলো জানার পর, আপনার কি মনে হচ্ছে ইংরেজি শেখার পথটা আরেকটু সহজ হয়ে গেল?

WBSSC SLST 2025: ৮০০০-এর বেশি শূন্যপদে ক্লার্ক ও গ্রুপ-ডি নিয়োগ! আবেদনের আগে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি জানতেই হবে

সূচনা: পশ্চিমবঙ্গ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ

পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (WBSSC) এক বিশাল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে। 1st SLST, 2025-এর মাধ্যমে রাজ্যের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত/স্পনসর্ড স্কুলগুলিতে নন-টিচিং স্টাফ (ক্লার্ক ও গ্রুপ-ডি) পদে বিপুল সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করা হবে। ক্লার্ক এবং গ্রুপ-ডি মিলিয়ে মোট শূন্যপদের সংখ্যা অনেক বেশি, যা চাকরিপ্রার্থীদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় খবর।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা কেবল শূন্যপদ বা যোগ্যতার মতো সাধারণ তথ্যই নয়, বরং কিছু অপ্রত্যাশিত কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেমন - আবশ্যিক ভাষার শর্ত বা নম্বর বিভাজনের খুঁটিনাটি দিকগুলোও তুলে ধরব যা আপনার আবেদনকে বাতিল হওয়া থেকে বাঁচাতে পারে। চলুন, এই সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নেওয়া যাক।

১. শূন্যপদের বিশাল সংখ্যা: সুযোগ এবার অনেকটাই বেশি

এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ক্লার্ক এবং গ্রুপ-ডি পদ মিলিয়ে মোট ৮৪৭৭টি সম্ভাব্য শূন্যপদ রয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক শূন্যপদ রাজ্যের চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ তৈরি করেছে।

পদের ভিত্তিতে শূন্যপদের বিভাজন নিচে দেওয়া হলো:

  • ক্লার্ক (Clerk): ২৯৮৯টি
  • গ্রুপ-ডি (Group D): ৫৪৮৮টি

এত বিশাল সংখ্যক শূন্যপদ থাকায় যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। তাই প্রস্তুতিতে কোনো খামতি রাখা উচিত হবে না।

২. শিক্ষাগত যোগ্যতা: অনেকের জন্যই আবেদনের দরজা খোলা

এই নিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হলো এর শিক্ষাগত যোগ্যতা, যা বহু সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর জন্য আবেদনের পথ খুলে দিয়েছে।

  • ক্লার্ক পদের জন্য: আবেদনকারীকে অবশ্যই স্কুল ফাইনাল/মাধ্যমিক বা সমতুল্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
  • গ্রুপ-ডি পদের জন্য: কোনো স্বীকৃত স্কুল বা বোর্ড থেকে অষ্টম শ্রেণি (Class VIII) পাস করলেই আবেদন করা যাবে।

এই সহজলভ্য যোগ্যতার মানদণ্ড পশ্চিমবঙ্গের এক বিশাল সংখ্যক প্রার্থীকে আবেদন করার সুযোগ করে দিয়েছে, যা এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।

৩. নিয়োগ পদ্ধতি শুধু লিখিত পরীক্ষা নয়: জেনে নিন নম্বরের সম্পূর্ণ বিভাজন

অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা থাকে যে শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত নির্বাচন হবে। কিন্তু বাস্তবে, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি একাধিক ধাপের উপর নির্ভরশীল এবং প্রতিটি ধাপের জন্য নির্দিষ্ট নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছে।

ক্লার্ক পদের জন্য (মোট ১০০ নম্বর):

  • লিখিত পরীক্ষা (OMR ভিত্তিক): ৬০ নম্বর
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: ১০ নম্বর এবং সমতুল্য অভিজ্ঞতা: ৫ নম্বর (মোট ১৫ নম্বর)
  • কম্পিউটার টাইপিং ও কম্পিউটার জ্ঞান সহ ইন্টারভিউ: ২৫ নম্বর

২৫ নম্বরের এই বিভাগটি আপনার ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক যোগ্যতাই নয়, আপনার কম্পিউটার টাইপিং-এর গতি এবং ব্যবহারিক জ্ঞান এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাই লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি নিয়মিত কম্পিউটার টাইপিং অনুশীলন করা আবশ্যক।

গ্রুপ-ডি স্টাফ পদের জন্য (মোট ৫০ নম্বর):

  • লিখিত পরীক্ষা (OMR ভিত্তিক): ৪০ নম্বর
  • সমতুল্য অভিজ্ঞতা: ৫ নম্বর
  • মৌখিক ইন্টারভিউ: ৫ নম্বর

সুতরাং, শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফল করলেই হবে না, চাকরি নিশ্চিত করতে হলে প্রতিটি বিভাগেই ভালো পারফর্ম করা অত্যন্ত জরুরি।

৪. লিখিত পরীক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: নেগেটিভ মার্কিং থাকছে না

লিখিত পরীক্ষা সংক্রান্ত কিছু জরুরি বিষয় প্রত্যেক আবেদনকারীর জেনে রাখা উচিত।

  • পরীক্ষাটি OMR শিটে মাল্টিপল-চয়েস প্রশ্ন (MCQ) পদ্ধতিতে হবে।
  • প্রশ্নপত্র ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ভাষাতেই তৈরি করা হবে।
  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই পরীক্ষায় ভুল উত্তরের জন্য কোনো নেগেটিভ মার্কিং নেই

বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:

"Provided also that there will be only one correct option, carrying one mark, out of four options provided for every question. There will be no negative marking for wrong answers."

এর অর্থ হলো, প্রতিটি প্রশ্নের চারটি বিকল্পের মধ্যে একটি সঠিক উত্তর থাকবে, যার জন্য ১ নম্বর বরাদ্দ। ভুল উত্তরের জন্য কোনো নম্বর কাটা হবে না। এটি পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশাল কৌশলগত সুবিধা। এর ফলে তাঁরা কোনো নম্বর হারানোর ভয় ছাড়াই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে পারবেন। প্রথমে যে প্রশ্নগুলির উত্তর নিশ্চিতভাবে জানেন, সেগুলি করুন এবং পরে বাকি প্রশ্নগুলির ক্ষেত্রে যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও অনুমান ব্যবহার করে উত্তর দিন।

৫. আবশ্যিক ভাষার শর্ত: এই বিষয়টি এড়িয়ে গেলে চলবে না

আবেদনের যোগ্যতার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো ভাষার দক্ষতা। যে স্কুলে আবেদনকারী চাকরি করতে ইচ্ছুক, সেই স্কুলের শিক্ষার মাধ্যম যে ভাষা, সেই ভাষায় তাঁকে অবশ্যই উত্তীর্ণ হতে হবে।

  • ক্লার্ক পদের জন্য: আবেদনকারীকে মাধ্যমিক স্তরে ওই ভাষাটি একটি বিষয় হিসেবে পড়তে হবে।
  • গ্রুপ-ডি পদের জন্য: অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ওই ভাষাটি একটি বিষয় হিসেবে পড়তে হবে।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বাংলা মাধ্যমের শূন্যপদই সর্বাধিক। তবে হিন্দি, উর্দু, নেপালি, এবং অন্যান্য ভাষার মিডিয়ামেও নির্দিষ্ট সংখ্যক শূন্যপদ রয়েছে। আবেদন করার আগে আপনার পছন্দের অঞ্চলের স্কুলগুলির মিডিয়াম কী এবং সেই ভাষায় আপনার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা আছে কিনা, তা মিলিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি। এই শর্তটি পূরণ না হলে আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে।

৬. আবেদন সংক্রান্ত জরুরি তথ্য: শুধু অনলাইনেই সুযোগ

আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেওয়া হলো:

  • শুধুমাত্র অনলাইন আবেদন: আবেদনপত্র শুধুমাত্র কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.westbengalssc.com) -এর মাধ্যমে অনলাইনে জমা দিতে হবে। অন্য কোনো পদ্ধতিতে আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
  • আবেদনের তারিখ: অনলাইন আবেদন শুরু হবে ০৩.১১.২০২৫ তারিখে এবং আবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হলো ০৩.১২.২০২৫ (বিকাল ৫টা পর্যন্ত)।
  • একাধিক আবেদন: যদি কোনো প্রার্থী একই পদের জন্য একাধিকবার আবেদন করেন, তবে শুধুমাত্র শেষ আবেদনটি (শেষ অ্যাপ্লিকেশন আইডি সহ) গ্রহণ করা হবে।
  • আবেদন ফি: জেনারেল, ওবিসি, ইডব্লিউএস (General, OBC, EWS) প্রার্থীদের জন্য আবেদন ফি ৪০০ টাকা এবং এসসি/এসটি/পিএইচ (SC/ST/PH) প্রার্থীদের জন্য ১৫০ টাকা।

উপসংহার: আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ

এই নিয়োগ প্রক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গের চাকরিপ্রার্থীদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বিশাল সুযোগ নিয়ে এসেছে। বিপুল শূন্যপদ, সহজলভ্য শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং একটি স্বচ্ছ, বহুস্তরীয় নিয়োগ পদ্ধতি এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে এই খুঁটিনাটি তথ্যগুলি ভালোভাবে জেনে রাখাই একটি সফল আবেদনের প্রথম ধাপ।

সঠিক তথ্য এবং সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে এই পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করা কঠিন নয়। এমন একটি স্পষ্ট এবং বড় সুযোগ যখন সামনে, তখন 1st SLST 2025-এ নিজের সাফল্য নিশ্চিত করতে আপনি কীভাবে আপনার প্রস্তুতির পরিকল্পনা করবেন? 

ভারতীয় সংবিধানের বিবর্তন: ঔপনিবেশিক আইন থেকে সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র পর্যন্ত একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ

 


ভারতীয় সংবিধানের বিবর্তন: ঔপনিবেশিক আইন থেকে সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র পর্যন্ত একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ

ভূমিকা

ভারতীয় সংবিধান কোনও আকস্মিক রাজনৈতিক ঘটনার ফল নয়, বরং এটি একটি দীর্ঘ ও জটিল ঐতিহাসিক বিবর্তনের চূড়ান্ত পরিণতি। এর ভিত্তি প্রোথিত রয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের প্রায় এক শতাব্দীর আইনগত ও রাজনৈতিক সংস্কারের মধ্যে। ১৮৫৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান এবং ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রত্যক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে সাংবিধানিক কাঠামোর সূচনা হয়েছিল, তা বিভিন্ন আইন ও সংস্কারের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে বিকশিত হয়ে অবশেষে ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা এবং ১৯৫০ সালের প্রজাতন্ত্র ঘোষণার মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে। এই বিশ্লেষণটির মূল উদ্দেশ্য হলো ঔপনিবেশিক আমলের প্রধান আইনগুলো থেকে শুরু করে গণপরিষদের গঠন এবং সংবিধান কার্যকর হওয়া পর্যন্ত এই ঐতিহাসিক যাত্রাপথের একটি বিশদ এবং বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা উপস্থাপন করা।

১. ব্রিটিশ রাজত্বের ভিত্তি স্থাপন এবং প্রাথমিক আইন সংস্কার (১৮৫৮-১৯০৯)

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় প্রশাসন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ১৮৫৮ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃতি আমূল পরিবর্তিত হয় এবং সরাসরি ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পর্বে প্রণীত কাউন্সিল আইনগুলো ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রাথমিক সংস্কারগুলো, যদিও ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের অধীনে ছিল, অনিচ্ছাকৃতভাবে ভারতীয়দের জন্য রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করেছিল। সীমিত পরিসরে হলেও, বাজেট আলোচনা ও প্রশ্ন করার অধিকার ভারতীয় অভিজাতদের মধ্যে সংসদীয় রীতিনীতির জন্ম দেয় এবং বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করে, যা ভবিষ্যতের সাংবিধানিক সংস্কারের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

ভারত শাসন আইন, ১৮৫৮

এই আইনটি ছিল ভারতীয় শাসনব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। এর মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটে এবং ভারতের শাসনভার সরাসরি ব্রিটিশ মহারানীর হাতে অর্পিত হয়। এই আইনের মূল বিধানগুলো ছিল নিম্নরূপ:

  • ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিবর্তে ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ মহারানীর উপর ন্যস্ত করা হয়।
  • ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার একজন সদস্যকে 'ভারত সচিব' (Secretary of State for India) হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, যিনি ভারতীয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।
  • ভারত সচিবকে সহায়তা করার জন্য একটি ১৫ সদস্যের পরিষদ (Council) গঠন করা হয়।

এই আইনের সবচেয়ে বড় তাৎপর্য ছিল এটি ভারতে একটি কেন্দ্রীভূত এবং দায়বদ্ধ (ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে) প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলে, যা পরবর্তী প্রায় ৯০ বছর ধরে কার্যকর ছিল।

ভারতীয় পরিষদ আইন, ১৮৬১ ও ১৮৯২

এই দুটি আইন ভারতে প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানের সূচনা করে। যদিও তাদের ক্ষমতা সীমিত ছিল, এই আইন দুটি ভারতীয়দের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রথম পদক্ষেপ ছিল। নিচে আইন দুটির একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ प्रस्तुत করা হলো:

বৈশিষ্ট্য

ভারতীয় পরিষদ আইন, ১৮৬১

ভারতীয় পরিষদ আইন, ১৮৯২

ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্তি

প্রথমবারের মতো ভারতীয়দের আইনসভায় 'অসরকারি' (non-official) সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদে অসরকারি সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।

নির্বাচন ব্যবস্থা

সদস্যদের মনোনয়নের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা হতো; কোনও নির্বাচন ব্যবস্থা ছিল না।

পরোক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার সূচনা করা হয়, যদিও 'নির্বাচন' শব্দটি স্পষ্টভাবে ব্যবহার করা হয়নি।

পরিষদের ক্ষমতা

আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হলেও, বাজেট আলোচনা বা প্রশ্ন করার অধিকার ছিল না।

সদস্যদের বাজেট নিয়ে আলোচনা করার এবং নির্দিষ্ট শর্তে প্রশ্ন করার সীমিত অধিকার দেওয়া হয়।

প্রাদেশিক পরিষদ

বোম্বে (মুম্বাই) এবং মাদ্রাজ (চেন্নাই) প্রেসিডেন্সিতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

প্রাদেশিক পরিষদের ক্ষমতা আরও কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়।

ভারতীয় পরিষদ আইন, ১৯০৯ (মর্লে-মিন্টো সংস্কার)

লর্ড মর্লে (তৎকালীন ভারত সচিব) এবং লর্ড মিন্টোর (তৎকালীন ভাইসরয়) নামে পরিচিত এই সংস্কার আইনটি পূর্ববর্তী আইনগুলোর তুলনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। এই আইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হয় এবং সদস্যদের বাজেট আলোচনা, সম্পূরক প্রশ্ন করা এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রস্তাব আনার অধিকার দেওয়া হয়।

তবে এই আইনের সবচেয়ে বিতর্কিত এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিল মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা (separate electorates) প্রবর্তন। এই ব্যবস্থার অধীনে মুসলিম সদস্যরা শুধুমাত্র মুসলিম ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত হতেন। এই পদক্ষেপটি ভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বীজ বপন করেছিল। ধর্মীয় পরিচয়কে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে এটি পৃথক রাজনৈতিক পথের জন্ম দেয়, যা সম্প্রদায়গত সহযোগিতাকে নিরুৎসাহিত করে এবং সরাসরি দ্বিজাতি তত্ত্বের যুক্তিকে শক্তিশালী করে তোলে। ফলস্বরূপ, যা ছিল একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, তা অবশেষে দেশভাগের এক অনিবার্য রাজনৈতিক বাস্তবতার ভিত্তি স্থাপন করে।

এই প্রাথমিক সংস্কারগুলো ভারতীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা तीव्रতর করে তোলে, যা পরবর্তী দশকে আরও ব্যাপক সাংবিধানিক পরিবর্তনের মঞ্চ প্রস্তুত করে।

২. স্বায়ত্তশাসনের পথে: দ্বৈত শাসন ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর রূপরেখা (১৯১৯-১৯৩৫)

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে প্রণীত আইন দুটি ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোকে এক নতুন পথে চালিত করে। ১৯১৯ এবং ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন দুটি শুধুমাত্র শাসনকার্যে ভারতীয়দের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করেনি, বরং একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিল এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ধারণাটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এই আইনগুলো ছিল ভারতের বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর প্রত্যক্ষ পূর্বসূরি।

ভারত শাসন আইন, ১৯১৯

মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার নামেও পরিচিত এই আইনটি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন নিয়ে আসে। এই আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল প্রাদেশিক স্তরে ‘দ্বৈত শাসন’ (Diarchy) ব্যবস্থার প্রবর্তন। এই ব্যবস্থায় প্রাদেশিক বিষয়গুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল – সংরক্ষিত (Reserved) এবং হস্তান্তরিত (Transferred)। গভর্নর তার কার্যনির্বাহী পরিষদের সাহায্যে সংরক্ষিত বিষয়গুলো (যেমন - অর্থ, পুলিশ) পরিচালনা করতেন এবং ভারতীয় মন্ত্রীদের সাহায্যে হস্তান্তরিত বিষয়গুলো (যেমন - শিক্ষা, স্বাস্থ্য) পরিচালনা করতেন, যাঁরা প্রাদেশিক আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকতেন। তবে এই ব্যবস্থাটি কাঠামোগতভাবে ব্যর্থ হওয়ার জন্যই তৈরি হয়েছিল, কারণ অর্থ এবং আইনশৃঙ্খলা-র মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলো ব্রিটিশদের হাতে সংরক্ষিত থাকায় ভারতীয় মন্ত্রীদের ভূমিকা মূলত ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছিল। কেন্দ্রে একটি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা (Bicameral Legislature) প্রতিষ্ঠিত হয়।

দ্বৈত শাসনের অন্তর্নিহিত ব্যর্থতা এবং ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী চাপের মুখে, ব্রিটিশ সরকার একটি আরও ব্যাপক সাংবিধানিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, যার ফলস্বরূপ ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন প্রণীত হয়।

ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫

এই আইনটি ছিল ব্রিটিশ ভারতে প্রণীত সর্বশেষ এবং সবচেয়ে વિસ્તృత সাংবিধানিক দলিল। এটিকে ভারতের বর্তমান সংবিধানের প্রধান উৎস বা ব্লুপ্রিন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে স্বাধীন ভারতের সংবিধানে এর অনেক কিছুই শুধু গৃহীতই হয়নি, বরং সেগুলোর দার্শনিক ধারাবাহিকতাও বজায় রাখা হয়েছে।

  • সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র: এই আইনে ব্রিটিশ শাসিত প্রদেশ এবং দেশীয় রাজ্যগুলোকে নিয়ে একটি 'সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র' (All-India Federation) গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। যদিও দেশীয় রাজ্যগুলোর আপত্তির কারণে এই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাটি বাস্তবে রূপায়িত হয়নি।
  • ক্ষমতা বিভাজন: কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের জন্য তিনটি তালিকা তৈরি করা হয়— কেন্দ্রীয় তালিকা (Central List), প্রাদেশিক তালিকা (Provincial List) এবং যুগ্ম তালিকা (Concurrent List)। এই বিভাজন শুধুমাত্র একটি সুবিধাজনক প্রশাসনিক কাঠামো ছিল না, এটি ছিল ভারতের বিপুল বৈচিত্র্যকে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বিত করার একটি অপরিহার্য নীতি, যা গণপরিষদ সরাসরি গ্রহণ করে।
  • যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত: কেন্দ্র ও প্রদেশগুলোর মধ্যে বা বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে সাংবিধানিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য দিল্লিতে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত (Federal Court) প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি কেবল ভারতের বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের পূর্বসূরিই ছিল না, এটি একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার (judicial review) নীতিটিকেও প্রতিষ্ঠা করেছিল।

তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠে জি. এফ. হোর (G. F. Hoare)-এর উক্তিতে, যেখানে তিনি বলেন, "It should be treated as the last political gift of the British Imperialism." এই আইনটি একটি পূর্ণাঙ্গ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রদান করলেও, ক্ষমতার চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ তখনও ব্রিটিশ সরকারের হাতেই ছিল।

এই আইনগত কাঠামো থাকা সত্ত্বেও, পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য ভারতীয়দের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা তীব্রতর হতে থাকে, যা চূড়ান্ত ক্ষমতা হস্তান্তরের আলোচনাকে অপরিহার্য করে তোলে।

৩. স্বাধীনতা ও বিভাজনের পথে: চূড়ান্ত রাজনৈতিক আলোচনা (১৯৪২-১৯৪৭)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। যুদ্ধের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধ্য হয়। এই পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক প্রস্তাবনা আনা হয়, যা কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যেকার ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক মেরুকরণের সাক্ষী। প্রতিটি ব্যর্থ প্রস্তাবনা দলগুলোর অবস্থানকে আরও কঠোর করে তোলে, যা পরবর্তী সমঝোতাকে আরও কঠিন করে তোলে এবং বিভাজনকে প্রায় অনিবার্য করে তোলে।

ক্রিপস প্রস্তাব (Cripps Proposal), ১৯৪২

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয়দের সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে এই মিশন ভারতে আসে। এর মূল প্রস্তাব ছিল যুদ্ধ শেষে ভারতকে ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস এবং একটি গণপরিষদ গঠন। কিন্তু প্রদেশগুলোকে ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার দেওয়ার প্রস্তাব কংগ্রেস প্রত্যাখ্যান করে, এবং মুসলিম লীগ পৃথক পাকিস্তানের দাবিতে অটল থাকায় এটি ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা অবিশ্বাসকে আরও গভীর করে।

ওয়াভেল পরিকল্পনা (Wavell Plan)

ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেল একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন, যেখানে ভাইসরয় ও প্রধান সেনাপতি ছাড়া বাকি সকল সদস্যই ভারতীয় হবেন। কিন্তু কার্যনির্বাহী পরিষদে হিন্দু ও মুসলিম সদস্যদের সংখ্যা নিয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে সৃষ্ট অচলাবস্থার কারণে এই পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়, যা প্রমাণ করে যে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিয়ে দুই দলের মধ্যে সমঝোতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা (Cabinet Mission Proposal), ১৯৪৬

ক্ষমতা হস্তান্তরের চূড়ান্ত প্রচেষ্টা হিসেবে ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মিশন একটি অখণ্ড ভারতের মধ্যে একটি দুর্বল কেন্দ্র এবং তিনটি প্রাদেশিক গোষ্ঠী নিয়ে একটি জটিল যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রস্তাব দেয়। এই পরিকল্পনাটিই ছিল অখণ্ড ভারতকে রক্ষা করার শেষ বাস্তবসম্মত সুযোগ। কিন্তু এর ব্যাখ্যা নিয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় এবং উভয় পক্ষই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে। এই মিশনের ব্যর্থতাই ছিল সেই નિર્ણায়ক মুহূর্ত, যা প্রমাণ করে যে একটি ঐক্যবদ্ধ ভারতের ধারণা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য আর কার্যকর নয়।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭

সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর, সর্বশেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ভারত বিভাজন ছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তর সম্ভব নয়। তার পরিকল্পনা, যা মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা নামে পরিচিত, ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ উভয়েই এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

এই পরিকল্পনাকে আইনি রূপ দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারতীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ (Indian Independence Act, 1947) পাস করে। এই আইন ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটায় এবং ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন ডোমিনিয়ন তৈরি করে।

ক্ষমতা হস্তান্তরের পর, নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্র ভারতের জন্য একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার গুরুদায়িত্ব গণপরিষদের উপর অর্পিত হয়।

৪. গণপরিষদ: একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধান রচনা (১৯৪৬-১৯৫০)

গণপরিষদ ছিল স্বাধীন ভারতের স্বপ্নকে একটি সাংবিধানিক দলিলে রূপান্তরিত করার ঐতিহাসিক মঞ্চ। এর সদস্যরা শুধুমাত্র একটি দেশের সর্বোচ্চ আইনই রচনা করেননি, বরং একটি সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক এবং প্রজাতন্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, এবং অঞ্চলের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত এই পরিষদ ভারতের বহুত্ববাদী চরিত্রকে ধারণ করে একটি শক্তিশালী ও স্থায়ী সংবিধান রচনা করতে সক্ষম হয়েছিল।

গণপরিষদের গঠন ও কার্যপ্রণালী

গণপরিষদের গঠন ও কার্যকলাপের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলো ছিল নিম্নরূপ:

  • গঠন: ১৯৪৬ সালের নভেম্বর মাসে ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনার অধীনে গণপরিষদ গঠিত হয়। এর প্রাথমিক সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৮৯, যাঁরা প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যদের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুসলিম লীগের সদস্যরা যোগ না দেওয়ায় প্রাথমিক কার্যক্রমে সদস্য সংখ্যা কমে আসে।
  • প্রথম অধিবেশন: ১৯৪৬ সালের ৯ই ডিসেম্বর গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে ডঃ সচ্চিদানন্দ সিনহাকে পরিষদের অস্থায়ী সভাপতি হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
  • স্থায়ী সভাপতি: ১৯৪৬ সালের ১১ই ডিসেম্বর ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ গণপরিষদের স্থায়ী সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।
  • উদ্দেশ্যমূলক প্রস্তাব (Objectives Resolution): ১৯৪৬ সালের ১৩ই ডিসেম্বর জওহরলাল নেহরু পরিষদে একটি 'উদ্দেশ্যমূলক প্রস্তাব' উত্থাপন করেন, যা সংবিধানের দর্শন ও মূলনীতির রূপরেখা প্রদান করে এবং পরবর্তীকালে সংবিধানের প্রস্তাবনার ভিত্তি হয়ে ওঠে।
  • খসড়া কমিটি (Drafting Committee): ১৯৪৭ সালের ২৯শে আগস্ট সংবিধানের খসড়া তৈরির জন্য একটি খসড়া কমিটি গঠন করা হয়। আইন বিশেষজ্ঞ ডঃ বি. আর. আম্বেদকরকে এই কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করা হয়, যিনি সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে প্রধান স্থপতির ভূমিকা পালন করেন।

সংবিধান গ্রহণ ও কার্যকর

অগণিত বিতর্ক, আলোচনা এবং সংশোধনের পর গণপরিষদ তার ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন করে।

  • ভারতীয় সংবিধান রচনা করতে মোট সময় লেগেছিল ২ বছর, ১১ মাস, ১৮ দিন
  • সংবিধান রচনার কাজ শেষ হলে, ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর তারিখে গণপরিষদ কর্তৃক এটি গৃহীত হয়। এই দিনটি বর্তমানে ভারতে 'সংবিধান দিবস' হিসেবে পালিত হয়।
  • অবশেষে, ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারী তারিখে ভারতীয় সংবিধান সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হয়। এই দিনটিকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো, ১৯৩০ সালের এই দিনেই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজের ডাক দিয়েছিল। এই দিন থেকে ভারত একটি ব্রিটিশ ডোমিনিয়নের পরিবর্তে একটি "সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র" (Sovereign Democratic Republic) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

এইভাবেই গণপরিষদ ভারতের জনগণকে এমন একটি সংবিধান উপহার দেয় যা দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণ করে এবং একটি নতুন প্রজাতন্ত্রের জন্ম দেয়।

৫. উপসংহার

ভারতীয় সংবিধানের বিবর্তন একটি দীর্ঘ এবং শিক্ষণীয় যাত্রার ইতিহাস। এটি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে প্রবর্তিত আইনগুলোর কাঠামো থেকে শুরু হয়ে, স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শ ও আকাঙ্ক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, এবং অবশেষে গণপরিষদের সদস্যদের জ্ঞান ও দূরদৃষ্টির মাধ্যমে একটি সার্বভৌম দলিলে পরিণত হয়েছে। ১৮৫৮ সালের নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন থেকে শুরু করে ১৯৩৫ সালের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর রূপরেখা, এবং পরিশেষে গণপরিষদ কর্তৃক একটি পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক সংবিধান রচনা—এই প্রতিটি ধাপই একে অপরের সাথে ঐতিহাসিকভাবে সংযুক্ত। ভারতীয় সংবিধান তাই শুধুমাত্র একটি আইনগ্রন্থ নয়, এটি একটি জাতির ঐতিহাসিক আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম এবং বহুত্ববাদী আদর্শের জীবন্ত প্রতীক, যা ঔপনিবেশিক অতীত থেকে একটি সার্বভৌম ভবিষ্যতের দিকে উত্তরণের সাক্ষ্য বহন করে।

পৃথিবীর পাথর নিয়ে ৪টি বিস্ময়কর তথ্য যা আপনার ধারণাই বদলে দেবে! ভূমিকা এক মুহূর্তের জন্য আপনার পায়ের নিচের মাটির কথা ভাবুন। আমরা প্রতিদিন যে পাথুরে পথ বা মাটির ওপর দিয়ে হেঁটে যাই, তাকে সাধারণত প্রাণহীন আর সাধারণ বলেই মনে করি। কিন্তু এই আপাত শান্ত পাথরের স্তরের নিচে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর কোটি কোটি বছরের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য রাসায়নিক গঠন আর বিস্ময়কর পরিবর্তনের গল্প। ভূতত্ত্ব বা জিওলজি আমাদের সেই গোপন কথাই শোনায়। এই লেখাটিতে আমরা ভূতত্ত্বের জগৎ থেকে এমন চারটি অবাক করা তথ্য তুলে ধরব, যা পাথর এবং আমাদের এই গ্রহ সম্পর্কে আপনার পুরোনো ধারণা পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। চলুন, পৃথিবীর গভীরে লুকিয়ে থাকা সেই রহস্যময় জগতের দিকে এক ঝলক উঁকি দেওয়া যাক। ১. আপনি কি জানেন? পৃথিবীর ভূত্বকের প্রধান উপাদান অক্সিজেন! শুনলে অবাক হবেন যে, আমরা শ্বাস নেওয়ার জন্য যে গ্যাস ব্যবহার করি, সেই অক্সিজেনই আমাদের পায়ের নিচের কঠিন ভূত্বকের সবচেয়ে প্রধান উপাদান। হ্যাঁ, গ্যাসীয় অক্সিজেন নয়, কঠিন পাথরের অক্সিজেন! ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পৃথিবীর ভূত্বকের মোট ভরের প্রায় ৪৬.৬% হলো অক্সিজেন। এর পরেই রয়েছে সিলিকন (২৭.৭%), অ্যালুমিনিয়াম (৮.১%) এবং লোহা (৫.০%)। কিন্তু এই অক্সিজেন বায়বীয় অবস্থায় ভেসে থাকে না। এটি সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম এবং অন্যান্য মৌলের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন খনিজ (minerals) তৈরি করে, আর সেই খনিজ দিয়েই গঠিত হয় নানা ধরনের পাথর। আমরা অক্সিজেনকে সবসময় বাতাসের অদৃশ্য একটি উপাদান হিসেবেই ভেবে এসেছি। অথচ প্রকৃতির কি আশ্চর্য খেলা, এর সবচেয়ে বড় ভান্ডারটি লুকিয়ে আছে আমাদের পায়ের নিচের কঠিন পাথরের মধ্যেই! ২. সাধারণ চুনাপাথরই রূপান্তরিত হয়ে তৈরি করে মহামূল্যবান মার্বেল পাথর মানেই কি স্থির আর অপরিবর্তনীয়? একদমই না। পৃথিবীর অভ্যন্তরের প্রচণ্ড তাপ এবং চাপের ফলে পাথর তার পুরোনো রূপ পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারে। ভূতত্ত্বের ভাষায় এই বদলে যাওয়া পাথরকে বলা হয় রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock)। এই প্রক্রিয়াটিকে পাথরের এক অসাধারণ "গ্লো-আপ" বা রূপান্তর বলা যেতে পারে। বিষয়টি বোঝার জন্য কিছু চমৎকার উদাহরণ রয়েছে: • সাধারণ চুনাপাথর (Limestone) প্রচণ্ড তাপ ও চাপে রূপান্তরিত হয়ে মহামূল্যবান মার্বেল (Marble) পাথরে পরিণত হয়। • নরম বেলেপাথর (Sandstone) রূপান্তরিত হয়ে পরিণত হয় অত্যন্ত কঠিন কোয়ার্টজাইট (Quartzite)-এ। • বহুল পরিচিত গ্রানাইট (Granite) পাথর রূপান্তরিত হয়ে তৈরি করে নাইস (Gneiss) নামক একটি নতুন ধরনের শিলা। এমনকি এই রূপান্তর প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপেও ঘটতে পারে। যেমন, কাদা পাথর (Shale) প্রথমে স্লেট (Slate)-এ রূপান্তরিত হয়, এবং পরবর্তীতে আরও তাপ ও চাপে সেই স্লেট পাথরই আবার ফিলাইট (Phyllite) নামক নতুন শিলাতে পরিণত হয়। এই রূপান্তরের ফলে পাথরগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং সুন্দর কেলাসিত (crystalline) গঠনে সজ্জিত হয়। পৃথিবীর এই সৃজনশীল শক্তি সাধারণ উপাদানকে অসাধারণ সৌন্দর্য ও মূল্যের বস্তুতে পরিণত করে, যা সত্যিই বিস্ময়কর। ৩. আমাদের মহাদেশ ও মহাসাগরের তলদেশ ভিন্ন উপাদানে তৈরি আমরা যে ভূত্বকের ওপর বাস করি, তা একটিমাত্র স্তর দিয়ে তৈরি নয়। ভূতাত্ত্বিকরা এর রাসায়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন, যা আমাদের গ্রহের পৃষ্ঠের গঠন বুঝতে সাহায্য করে। এই দুটি স্তর হলো: • সিয়াল (Sial): এটি ভূত্বকের উপরের হালকা স্তর, যা দিয়ে মূলত আমাদের মহাদেশগুলো গঠিত। মহাদেশীয় এই স্তরটি প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার পুরু। এর নামটি এসেছে এর প্রধান দুটি উপাদান সিলিকন (SIlicon) এবং অ্যালুমিনিয়াম (ALuminium)-এর নামের প্রথম অংশ থেকে। • সিমা (Sima): এটি সিয়াল স্তরের নিচে অবস্থিত এবং তুলনামূলকভাবে ভারী একটি স্তর। মহাসাগরের তলদেশ মূলত এই স্তরটি দিয়েই তৈরি, যা মাত্র ৫-৭ কিলোমিটার পুরু। এর নামটিও এর প্রধান উপাদান সিলিকন (SIlicon) এবং ম্যাগনেসিয়াম (MAgnesium) থেকে নেওয়া হয়েছে। সহজ কথায়, আমরা মহাদেশে যে পুরু স্তরটির ওপর দাঁড়িয়ে আছি, তার গঠন আর গভীর সমুদ্রের নিচের পাতলা কিন্তু ভারী স্তরটির গঠন এক নয়। এই সাধারণ পার্থক্যটিই পৃথিবীর পৃষ্ঠের মূল কাঠামো তৈরি করেছে। ৪. অবাক হবেন, পাথরেরও আছে 'আম্লিক' ও 'ক্ষারকীয়' পরিচয়! রসায়ন ক্লাসের 'অ্যাসিড' আর 'বেস' বা আম্লিক ও ক্ষারকীয় শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ভূতাত্ত্বিকরাও কিছু পাথরকে বর্ণনা করার জন্য এই শব্দগুলো ব্যবহার করেন? আগ্নেয় শিলা (Igneous Rocks), অর্থাৎ আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে তৈরি পাথরকে তাদের রাসায়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়: • আম্লিক (Acidic) শিলা: যে শিলাগুলিতে সিলিকার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, তাদের আম্লিক শিলা বলা হয়। এর সেরা উদাহরণ হলো গ্রানাইট (Granite)। • মধ্যবর্তী (Intermediate) শিলা: এই শিলাগুলিতে ক্ষারকীয় অক্সাইড ও সিলিকা প্রায় সমান পরিমাণে থাকে। • ক্ষারকীয় (Basic) শিলা: এই শিলাগুলিতে ক্ষারকীয় বা তারকীয় পদার্থের পরিমাণ ৪২%-এর বেশি থাকে। যেমন—ব্যাসল্ট (Basalt)। • অতি ক্ষারকীয় (Ultra basic) শিলা: যখন ক্ষারকীয় পদার্থের পরিমাণ ৫৫%-এর বেশি হয়, তখন তাকে অতি ক্ষারকীয় শিলা বলা হয়, যেমন পেরিডোটাইট (Peridotite)। এই রাসায়নিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে একটি পাথরের ধর্ম এবং গঠন তার ভেতরের মৌলিক রসায়নের ওপর কতটা নির্ভরশীল, ঠিক যেমনটা অন্য যেকোনো পদার্থের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। উপসংহার আমরা যে মাটির ওপর চলি, তা মোটেই নীরস বা স্থির নয়। এর গভীরে রয়েছে অবাক করা রসায়ন, নাটকীয় রূপান্তর আর সুশৃঙ্খল এক গঠন। অক্সিজেন থেকে মার্বেলের জন্ম, কিংবা মহাদেশ ও মহাসাগরের ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তি—প্রতিটি তথ্যই আমাদের গ্রহের এক একটি অবিশ্বাস্য গল্পের অংশ। এখন থেকে যখন কোনো পাথর দেখবেন, তখন কি শুধু পাথর হিসেবেই দেখবেন, নাকি এর পেছনের অবিশ্বাস্য গল্পটা ভাববেন?


পৃথিবীর পাথর নিয়ে ৪টি বিস্ময়কর তথ্য যা আপনার ধারণাই বদলে দেবে!
ভূমিকা
এক মুহূর্তের জন্য আপনার পায়ের নিচের মাটির কথা ভাবুন। আমরা প্রতিদিন যে পাথুরে পথ বা মাটির ওপর দিয়ে হেঁটে যাই, তাকে সাধারণত প্রাণহীন আর সাধারণ বলেই মনে করি। কিন্তু এই আপাত শান্ত পাথরের স্তরের নিচে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর কোটি কোটি বছরের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য রাসায়নিক গঠন আর বিস্ময়কর পরিবর্তনের গল্প। ভূতত্ত্ব বা জিওলজি আমাদের সেই গোপন কথাই শোনায়।
এই লেখাটিতে আমরা ভূতত্ত্বের জগৎ থেকে এমন চারটি অবাক করা তথ্য তুলে ধরব, যা পাথর এবং আমাদের এই গ্রহ সম্পর্কে আপনার পুরোনো ধারণা পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। চলুন, পৃথিবীর গভীরে লুকিয়ে থাকা সেই রহস্যময় জগতের দিকে এক ঝলক উঁকি দেওয়া যাক।
১. আপনি কি জানেন? পৃথিবীর ভূত্বকের প্রধান উপাদান অক্সিজেন!
শুনলে অবাক হবেন যে, আমরা শ্বাস নেওয়ার জন্য যে গ্যাস ব্যবহার করি, সেই অক্সিজেনই আমাদের পায়ের নিচের কঠিন ভূত্বকের সবচেয়ে প্রধান উপাদান। হ্যাঁ, গ্যাসীয় অক্সিজেন নয়, কঠিন পাথরের অক্সিজেন!
ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পৃথিবীর ভূত্বকের মোট ভরের প্রায় ৪৬.৬% হলো অক্সিজেন। এর পরেই রয়েছে সিলিকন (২৭.৭%), অ্যালুমিনিয়াম (৮.১%) এবং লোহা (৫.০%)। কিন্তু এই অক্সিজেন বায়বীয় অবস্থায় ভেসে থাকে না। এটি সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম এবং অন্যান্য মৌলের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন খনিজ (minerals) তৈরি করে, আর সেই খনিজ দিয়েই গঠিত হয় নানা ধরনের পাথর।
আমরা অক্সিজেনকে সবসময় বাতাসের অদৃশ্য একটি উপাদান হিসেবেই ভেবে এসেছি। অথচ প্রকৃতির কি আশ্চর্য খেলা, এর সবচেয়ে বড় ভান্ডারটি লুকিয়ে আছে আমাদের পায়ের নিচের কঠিন পাথরের মধ্যেই!
২. সাধারণ চুনাপাথরই রূপান্তরিত হয়ে তৈরি করে মহামূল্যবান মার্বেল
পাথর মানেই কি স্থির আর অপরিবর্তনীয়? একদমই না। পৃথিবীর অভ্যন্তরের প্রচণ্ড তাপ এবং চাপের ফলে পাথর তার পুরোনো রূপ পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারে। ভূতত্ত্বের ভাষায় এই বদলে যাওয়া পাথরকে বলা হয় রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock)। এই প্রক্রিয়াটিকে পাথরের এক অসাধারণ "গ্লো-আপ" বা রূপান্তর বলা যেতে পারে।
বিষয়টি বোঝার জন্য কিছু চমৎকার উদাহরণ রয়েছে:
• সাধারণ চুনাপাথর (Limestone) প্রচণ্ড তাপ ও চাপে রূপান্তরিত হয়ে মহামূল্যবান মার্বেল (Marble) পাথরে পরিণত হয়।
• নরম বেলেপাথর (Sandstone) রূপান্তরিত হয়ে পরিণত হয় অত্যন্ত কঠিন কোয়ার্টজাইট (Quartzite)-এ।
• বহুল পরিচিত গ্রানাইট (Granite) পাথর রূপান্তরিত হয়ে তৈরি করে নাইস (Gneiss) নামক একটি নতুন ধরনের শিলা।
এমনকি এই রূপান্তর প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপেও ঘটতে পারে। যেমন, কাদা পাথর (Shale) প্রথমে স্লেট (Slate)-এ রূপান্তরিত হয়, এবং পরবর্তীতে আরও তাপ ও চাপে সেই স্লেট পাথরই আবার ফিলাইট (Phyllite) নামক নতুন শিলাতে পরিণত হয়। এই রূপান্তরের ফলে পাথরগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং সুন্দর কেলাসিত (crystalline) গঠনে সজ্জিত হয়। পৃথিবীর এই সৃজনশীল শক্তি সাধারণ উপাদানকে অসাধারণ সৌন্দর্য ও মূল্যের বস্তুতে পরিণত করে, যা সত্যিই বিস্ময়কর।
৩. আমাদের মহাদেশ ও মহাসাগরের তলদেশ ভিন্ন উপাদানে তৈরি
আমরা যে ভূত্বকের ওপর বাস করি, তা একটিমাত্র স্তর দিয়ে তৈরি নয়। ভূতাত্ত্বিকরা এর রাসায়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন, যা আমাদের গ্রহের পৃষ্ঠের গঠন বুঝতে সাহায্য করে।
এই দুটি স্তর হলো:
• সিয়াল (Sial): এটি ভূত্বকের উপরের হালকা স্তর, যা দিয়ে মূলত আমাদের মহাদেশগুলো গঠিত। মহাদেশীয় এই স্তরটি প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার পুরু। এর নামটি এসেছে এর প্রধান দুটি উপাদান সিলিকন (SIlicon) এবং অ্যালুমিনিয়াম (ALuminium)-এর নামের প্রথম অংশ থেকে।
• সিমা (Sima): এটি সিয়াল স্তরের নিচে অবস্থিত এবং তুলনামূলকভাবে ভারী একটি স্তর। মহাসাগরের তলদেশ মূলত এই স্তরটি দিয়েই তৈরি, যা মাত্র ৫-৭ কিলোমিটার পুরু। এর নামটিও এর প্রধান উপাদান সিলিকন (SIlicon) এবং ম্যাগনেসিয়াম (MAgnesium) থেকে নেওয়া হয়েছে।
সহজ কথায়, আমরা মহাদেশে যে পুরু স্তরটির ওপর দাঁড়িয়ে আছি, তার গঠন আর গভীর সমুদ্রের নিচের পাতলা কিন্তু ভারী স্তরটির গঠন এক নয়। এই সাধারণ পার্থক্যটিই পৃথিবীর পৃষ্ঠের মূল কাঠামো তৈরি করেছে।
৪. অবাক হবেন, পাথরেরও আছে 'আম্লিক' ও 'ক্ষারকীয়' পরিচয়!
রসায়ন ক্লাসের 'অ্যাসিড' আর 'বেস' বা আম্লিক ও ক্ষারকীয় শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ভূতাত্ত্বিকরাও কিছু পাথরকে বর্ণনা করার জন্য এই শব্দগুলো ব্যবহার করেন?
আগ্নেয় শিলা (Igneous Rocks), অর্থাৎ আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে তৈরি পাথরকে তাদের রাসায়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:
• আম্লিক (Acidic) শিলা: যে শিলাগুলিতে সিলিকার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, তাদের আম্লিক শিলা বলা হয়। এর সেরা উদাহরণ হলো গ্রানাইট (Granite)
• মধ্যবর্তী (Intermediate) শিলা: এই শিলাগুলিতে ক্ষারকীয় অক্সাইড ও সিলিকা প্রায় সমান পরিমাণে থাকে।
• ক্ষারকীয় (Basic) শিলা: এই শিলাগুলিতে ক্ষারকীয় বা তারকীয় পদার্থের পরিমাণ ৪২%-এর বেশি থাকে। যেমন—ব্যাসল্ট (Basalt)
• অতি ক্ষারকীয় (Ultra basic) শিলা: যখন ক্ষারকীয় পদার্থের পরিমাণ ৫৫%-এর বেশি হয়, তখন তাকে অতি ক্ষারকীয় শিলা বলা হয়, যেমন পেরিডোটাইট (Peridotite)
এই রাসায়নিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে একটি পাথরের ধর্ম এবং গঠন তার ভেতরের মৌলিক রসায়নের ওপর কতটা নির্ভরশীল, ঠিক যেমনটা অন্য যেকোনো পদার্থের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
উপসংহার
আমরা যে মাটির ওপর চলি, তা মোটেই নীরস বা স্থির নয়। এর গভীরে রয়েছে অবাক করা রসায়ন, নাটকীয় রূপান্তর আর সুশৃঙ্খল এক গঠন। অক্সিজেন থেকে মার্বেলের জন্ম, কিংবা মহাদেশ ও মহাসাগরের ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তি—প্রতিটি তথ্যই আমাদের গ্রহের এক একটি অবিশ্বাস্য গল্পের অংশ।
এখন থেকে যখন কোনো পাথর দেখবেন, তখন কি শুধু পাথর হিসেবেই দেখবেন, নাকি এর পেছনের অবিশ্বাস্য গল্পটা ভাববেন?

ভূমিকা
এক মুহূর্তের জন্য আপনার পায়ের নিচের মাটির কথা ভাবুন। আমরা প্রতিদিন যে পাথুরে পথ বা মাটির ওপর দিয়ে হেঁটে যাই, তাকে সাধারণত প্রাণহীন আর সাধারণ বলেই মনে করি। কিন্তু এই আপাত শান্ত পাথরের স্তরের নিচে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর কোটি কোটি বছরের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য রাসায়নিক গঠন আর বিস্ময়কর পরিবর্তনের গল্প। ভূতত্ত্ব বা জিওলজি আমাদের সেই গোপন কথাই শোনায়।
এই লেখাটিতে আমরা ভূতত্ত্বের জগৎ থেকে এমন চারটি অবাক করা তথ্য তুলে ধরব, যা পাথর এবং আমাদের এই গ্রহ সম্পর্কে আপনার পুরোনো ধারণা পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। চলুন, পৃথিবীর গভীরে লুকিয়ে থাকা সেই রহস্যময় জগতের দিকে এক ঝলক উঁকি দেওয়া যাক।
১. আপনি কি জানেন? পৃথিবীর ভূত্বকের প্রধান উপাদান অক্সিজেন!
শুনলে অবাক হবেন যে, আমরা শ্বাস নেওয়ার জন্য যে গ্যাস ব্যবহার করি, সেই অক্সিজেনই আমাদের পায়ের নিচের কঠিন ভূত্বকের সবচেয়ে প্রধান উপাদান। হ্যাঁ, গ্যাসীয় অক্সিজেন নয়, কঠিন পাথরের অক্সিজেন!
ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পৃথিবীর ভূত্বকের মোট ভরের প্রায় ৪৬.৬% হলো অক্সিজেন। এর পরেই রয়েছে সিলিকন (২৭.৭%), অ্যালুমিনিয়াম (৮.১%) এবং লোহা (৫.০%)। কিন্তু এই অক্সিজেন বায়বীয় অবস্থায় ভেসে থাকে না। এটি সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম এবং অন্যান্য মৌলের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন খনিজ (minerals) তৈরি করে, আর সেই খনিজ দিয়েই গঠিত হয় নানা ধরনের পাথর।
আমরা অক্সিজেনকে সবসময় বাতাসের অদৃশ্য একটি উপাদান হিসেবেই ভেবে এসেছি। অথচ প্রকৃতির কি আশ্চর্য খেলা, এর সবচেয়ে বড় ভান্ডারটি লুকিয়ে আছে আমাদের পায়ের নিচের কঠিন পাথরের মধ্যেই!
২. সাধারণ চুনাপাথরই রূপান্তরিত হয়ে তৈরি করে মহামূল্যবান মার্বেল
পাথর মানেই কি স্থির আর অপরিবর্তনীয়? একদমই না। পৃথিবীর অভ্যন্তরের প্রচণ্ড তাপ এবং চাপের ফলে পাথর তার পুরোনো রূপ পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারে। ভূতত্ত্বের ভাষায় এই বদলে যাওয়া পাথরকে বলা হয় রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock)। এই প্রক্রিয়াটিকে পাথরের এক অসাধারণ "গ্লো-আপ" বা রূপান্তর বলা যেতে পারে।
বিষয়টি বোঝার জন্য কিছু চমৎকার উদাহরণ রয়েছে:
• সাধারণ চুনাপাথর (Limestone) প্রচণ্ড তাপ ও চাপে রূপান্তরিত হয়ে মহামূল্যবান মার্বেল (Marble) পাথরে পরিণত হয়।
• নরম বেলেপাথর (Sandstone) রূপান্তরিত হয়ে পরিণত হয় অত্যন্ত কঠিন কোয়ার্টজাইট (Quartzite)-এ।
• বহুল পরিচিত গ্রানাইট (Granite) পাথর রূপান্তরিত হয়ে তৈরি করে নাইস (Gneiss) নামক একটি নতুন ধরনের শিলা।
এমনকি এই রূপান্তর প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপেও ঘটতে পারে। যেমন, কাদা পাথর (Shale) প্রথমে স্লেট (Slate)-এ রূপান্তরিত হয়, এবং পরবর্তীতে আরও তাপ ও চাপে সেই স্লেট পাথরই আবার ফিলাইট (Phyllite) নামক নতুন শিলাতে পরিণত হয়। এই রূপান্তরের ফলে পাথরগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং সুন্দর কেলাসিত (crystalline) গঠনে সজ্জিত হয়। পৃথিবীর এই সৃজনশীল শক্তি সাধারণ উপাদানকে অসাধারণ সৌন্দর্য ও মূল্যের বস্তুতে পরিণত করে, যা সত্যিই বিস্ময়কর।
৩. আমাদের মহাদেশ ও মহাসাগরের তলদেশ ভিন্ন উপাদানে তৈরি
আমরা যে ভূত্বকের ওপর বাস করি, তা একটিমাত্র স্তর দিয়ে তৈরি নয়। ভূতাত্ত্বিকরা এর রাসায়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন, যা আমাদের গ্রহের পৃষ্ঠের গঠন বুঝতে সাহায্য করে।
এই দুটি স্তর হলো:
• সিয়াল (Sial): এটি ভূত্বকের উপরের হালকা স্তর, যা দিয়ে মূলত আমাদের মহাদেশগুলো গঠিত। মহাদেশীয় এই স্তরটি প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার পুরু। এর নামটি এসেছে এর প্রধান দুটি উপাদান সিলিকন (SIlicon) এবং অ্যালুমিনিয়াম (ALuminium)-এর নামের প্রথম অংশ থেকে।
• সিমা (Sima): এটি সিয়াল স্তরের নিচে অবস্থিত এবং তুলনামূলকভাবে ভারী একটি স্তর। মহাসাগরের তলদেশ মূলত এই স্তরটি দিয়েই তৈরি, যা মাত্র ৫-৭ কিলোমিটার পুরু। এর নামটিও এর প্রধান উপাদান সিলিকন (SIlicon) এবং ম্যাগনেসিয়াম (MAgnesium) থেকে নেওয়া হয়েছে।
সহজ কথায়, আমরা মহাদেশে যে পুরু স্তরটির ওপর দাঁড়িয়ে আছি, তার গঠন আর গভীর সমুদ্রের নিচের পাতলা কিন্তু ভারী স্তরটির গঠন এক নয়। এই সাধারণ পার্থক্যটিই পৃথিবীর পৃষ্ঠের মূল কাঠামো তৈরি করেছে।
৪. অবাক হবেন, পাথরেরও আছে 'আম্লিক' ও 'ক্ষারকীয়' পরিচয়!
রসায়ন ক্লাসের 'অ্যাসিড' আর 'বেস' বা আম্লিক ও ক্ষারকীয় শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ভূতাত্ত্বিকরাও কিছু পাথরকে বর্ণনা করার জন্য এই শব্দগুলো ব্যবহার করেন?
আগ্নেয় শিলা (Igneous Rocks), অর্থাৎ আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে তৈরি পাথরকে তাদের রাসায়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:
• আম্লিক (Acidic) শিলা: যে শিলাগুলিতে সিলিকার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, তাদের আম্লিক শিলা বলা হয়। এর সেরা উদাহরণ হলো গ্রানাইট (Granite)
• মধ্যবর্তী (Intermediate) শিলা: এই শিলাগুলিতে ক্ষারকীয় অক্সাইড ও সিলিকা প্রায় সমান পরিমাণে থাকে।
• ক্ষারকীয় (Basic) শিলা: এই শিলাগুলিতে ক্ষারকীয় বা তারকীয় পদার্থের পরিমাণ ৪২%-এর বেশি থাকে। যেমন—ব্যাসল্ট (Basalt)
• অতি ক্ষারকীয় (Ultra basic) শিলা: যখন ক্ষারকীয় পদার্থের পরিমাণ ৫৫%-এর বেশি হয়, তখন তাকে অতি ক্ষারকীয় শিলা বলা হয়, যেমন পেরিডোটাইট (Peridotite)
এই রাসায়নিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে একটি পাথরের ধর্ম এবং গঠন তার ভেতরের মৌলিক রসায়নের ওপর কতটা নির্ভরশীল, ঠিক যেমনটা অন্য যেকোনো পদার্থের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
উপসংহার
আমরা যে মাটির ওপর চলি, তা মোটেই নীরস বা স্থির নয়। এর গভীরে রয়েছে অবাক করা রসায়ন, নাটকীয় রূপান্তর আর সুশৃঙ্খল এক গঠন। অক্সিজেন থেকে মার্বেলের জন্ম, কিংবা মহাদেশ ও মহাসাগরের ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তি—প্রতিটি তথ্যই আমাদের গ্রহের এক একটি অবিশ্বাস্য গল্পের অংশ।
এখন থেকে যখন কোনো পাথর দেখবেন, তখন কি শুধু পাথর হিসেবেই দেখবেন, নাকি এর পেছনের অবিশ্বাস্য গল্পটা ভাববেন?
পৃথিবীর পাথর নিয়ে ৪টি বিস্ময়কর তথ্য যা আপনার ধারণাই বদলে দেবে!
ভূমিকা
এক মুহূর্তের জন্য আপনার পায়ের নিচের মাটির কথা ভাবুন। আমরা প্রতিদিন যে পাথুরে পথ বা মাটির ওপর দিয়ে হেঁটে যাই, তাকে সাধারণত প্রাণহীন আর সাধারণ বলেই মনে করি। কিন্তু এই আপাত শান্ত পাথরের স্তরের নিচে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর কোটি কোটি বছরের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য রাসায়নিক গঠন আর বিস্ময়কর পরিবর্তনের গল্প। ভূতত্ত্ব বা জিওলজি আমাদের সেই গোপন কথাই শোনায়।
এই লেখাটিতে আমরা ভূতত্ত্বের জগৎ থেকে এমন চারটি অবাক করা তথ্য তুলে ধরব, যা পাথর এবং আমাদের এই গ্রহ সম্পর্কে আপনার পুরোনো ধারণা পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। চলুন, পৃথিবীর গভীরে লুকিয়ে থাকা সেই রহস্যময় জগতের দিকে এক ঝলক উঁকি দেওয়া যাক।
১. আপনি কি জানেন? পৃথিবীর ভূত্বকের প্রধান উপাদান অক্সিজেন!
শুনলে অবাক হবেন যে, আমরা শ্বাস নেওয়ার জন্য যে গ্যাস ব্যবহার করি, সেই অক্সিজেনই আমাদের পায়ের নিচের কঠিন ভূত্বকের সবচেয়ে প্রধান উপাদান। হ্যাঁ, গ্যাসীয় অক্সিজেন নয়, কঠিন পাথরের অক্সিজেন!
ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পৃথিবীর ভূত্বকের মোট ভরের প্রায় ৪৬.৬% হলো অক্সিজেন। এর পরেই রয়েছে সিলিকন (২৭.৭%), অ্যালুমিনিয়াম (৮.১%) এবং লোহা (৫.০%)। কিন্তু এই অক্সিজেন বায়বীয় অবস্থায় ভেসে থাকে না। এটি সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম এবং অন্যান্য মৌলের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন খনিজ (minerals) তৈরি করে, আর সেই খনিজ দিয়েই গঠিত হয় নানা ধরনের পাথর।
আমরা অক্সিজেনকে সবসময় বাতাসের অদৃশ্য একটি উপাদান হিসেবেই ভেবে এসেছি। অথচ প্রকৃতির কি আশ্চর্য খেলা, এর সবচেয়ে বড় ভান্ডারটি লুকিয়ে আছে আমাদের পায়ের নিচের কঠিন পাথরের মধ্যেই!
২. সাধারণ চুনাপাথরই রূপান্তরিত হয়ে তৈরি করে মহামূল্যবান মার্বেল
পাথর মানেই কি স্থির আর অপরিবর্তনীয়? একদমই না। পৃথিবীর অভ্যন্তরের প্রচণ্ড তাপ এবং চাপের ফলে পাথর তার পুরোনো রূপ পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারে। ভূতত্ত্বের ভাষায় এই বদলে যাওয়া পাথরকে বলা হয় রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock)। এই প্রক্রিয়াটিকে পাথরের এক অসাধারণ "গ্লো-আপ" বা রূপান্তর বলা যেতে পারে।
বিষয়টি বোঝার জন্য কিছু চমৎকার উদাহরণ রয়েছে:
 সাধারণ চুনাপাথর (Limestone) প্রচণ্ড তাপ ও চাপে রূপান্তরিত হয়ে মহামূল্যবান মার্বেল (Marble) পাথরে পরিণত হয়।
 নরম বেলেপাথর (Sandstone) রূপান্তরিত হয়ে পরিণত হয় অত্যন্ত কঠিন কোয়ার্টজাইট (Quartzite)-এ।
 বহুল পরিচিত গ্রানাইট (Granite) পাথর রূপান্তরিত হয়ে তৈরি করে নাইস (Gneiss) নামক একটি নতুন ধরনের শিলা।
এমনকি এই রূপান্তর প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপেও ঘটতে পারে। যেমন, কাদা পাথর (Shale) প্রথমে স্লেট (Slate)-এ রূপান্তরিত হয়, এবং পরবর্তীতে আরও তাপ ও চাপে সেই স্লেট পাথরই আবার ফিলাইট (Phyllite) নামক নতুন শিলাতে পরিণত হয়। এই রূপান্তরের ফলে পাথরগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং সুন্দর কেলাসিত (crystalline) গঠনে সজ্জিত হয়। পৃথিবীর এই সৃজনশীল শক্তি সাধারণ উপাদানকে অসাধারণ সৌন্দর্য ও মূল্যের বস্তুতে পরিণত করে, যা সত্যিই বিস্ময়কর।
৩. আমাদের মহাদেশ ও মহাসাগরের তলদেশ ভিন্ন উপাদানে তৈরি
আমরা যে ভূত্বকের ওপর বাস করি, তা একটিমাত্র স্তর দিয়ে তৈরি নয়। ভূতাত্ত্বিকরা এর রাসায়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন, যা আমাদের গ্রহের পৃষ্ঠের গঠন বুঝতে সাহায্য করে।
এই দুটি স্তর হলো:
 সিয়াল (Sial): এটি ভূত্বকের উপরের হালকা স্তর, যা দিয়ে মূলত আমাদের মহাদেশগুলো গঠিত। মহাদেশীয় এই স্তরটি প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার পুরু। এর নামটি এসেছে এর প্রধান দুটি উপাদান সিলিকন (SIlicon) এবং অ্যালুমিনিয়াম (ALuminium)-এর নামের প্রথম অংশ থেকে।
 সিমা (Sima): এটি সিয়াল স্তরের নিচে অবস্থিত এবং তুলনামূলকভাবে ভারী একটি স্তর। মহাসাগরের তলদেশ মূলত এই স্তরটি দিয়েই তৈরি, যা মাত্র ৫-৭ কিলোমিটার পুরু। এর নামটিও এর প্রধান উপাদান সিলিকন (SIlicon) এবং ম্যাগনেসিয়াম (MAgnesium) থেকে নেওয়া হয়েছে।
সহজ কথায়, আমরা মহাদেশে যে পুরু স্তরটির ওপর দাঁড়িয়ে আছি, তার গঠন আর গভীর সমুদ্রের নিচের পাতলা কিন্তু ভারী স্তরটির গঠন এক নয়। এই সাধারণ পার্থক্যটিই পৃথিবীর পৃষ্ঠের মূল কাঠামো তৈরি করেছে।
৪. অবাক হবেন, পাথরেরও আছে 'আম্লিক' ও 'ক্ষারকীয়' পরিচয়!
রসায়ন ক্লাসের 'অ্যাসিড' আর 'বেস' বা আম্লিক ও ক্ষারকীয় শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ভূতাত্ত্বিকরাও কিছু পাথরকে বর্ণনা করার জন্য এই শব্দগুলো ব্যবহার করেন?
আগ্নেয় শিলা (Igneous Rocks), অর্থাৎ আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে তৈরি পাথরকে তাদের রাসায়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:
 আম্লিক (Acidic) শিলা: যে শিলাগুলিতে সিলিকার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, তাদের আম্লিক শিলা বলা হয়। এর সেরা উদাহরণ হলো গ্রানাইট (Granite)
 মধ্যবর্তী (Intermediate) শিলা: এই শিলাগুলিতে ক্ষারকীয় অক্সাইড ও সিলিকা প্রায় সমান পরিমাণে থাকে।
 ক্ষারকীয় (Basic) শিলা: এই শিলাগুলিতে ক্ষারকীয় বা তারকীয় পদার্থের পরিমাণ ৪২%-এর বেশি থাকে। যেমন—ব্যাসল্ট (Basalt)
 অতি ক্ষারকীয় (Ultra basic) শিলা: যখন ক্ষারকীয় পদার্থের পরিমাণ ৫৫%-এর বেশি হয়, তখন তাকে অতি ক্ষারকীয় শিলা বলা হয়, যেমন পেরিডোটাইট (Peridotite)
এই রাসায়নিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে একটি পাথরের ধর্ম এবং গঠন তার ভেতরের মৌলিক রসায়নের ওপর কতটা নির্ভরশীল, ঠিক যেমনটা অন্য যেকোনো পদার্থের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
উপসংহার
আমরা যে মাটির ওপর চলি, তা মোটেই নীরস বা স্থির নয়। এর গভীরে রয়েছে অবাক করা রসায়ন, নাটকীয় রূপান্তর আর সুশৃঙ্খল এক গঠন। অক্সিজেন থেকে মার্বেলের জন্ম, কিংবা মহাদেশ ও মহাসাগরের ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তি—প্রতিটি তথ্যই আমাদের গ্রহের এক একটি অবিশ্বাস্য গল্পের অংশ।
এখন থেকে যখন কোনো পাথর দেখবেন, তখন কি শুধু পাথর হিসেবেই দেখবেন, নাকি এর পেছনের অবিশ্বাস্য গল্পটা ভাববেন?
ভূমিকা
এক মুহূর্তের জন্য আপনার পায়ের নিচের মাটির কথা ভাবুন। আমরা প্রতিদিন যে পাথুরে পথ বা মাটির ওপর দিয়ে হেঁটে যাই, তাকে সাধারণত প্রাণহীন আর সাধারণ বলেই মনে করি। কিন্তু এই আপাত শান্ত পাথরের স্তরের নিচে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর কোটি কোটি বছরের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য রাসায়নিক গঠন আর বিস্ময়কর পরিবর্তনের গল্প। ভূতত্ত্ব বা জিওলজি আমাদের সেই গোপন কথাই শোনায়।
এই লেখাটিতে আমরা ভূতত্ত্বের জগৎ থেকে এমন চারটি অবাক করা তথ্য তুলে ধরব, যা পাথর এবং আমাদের এই গ্রহ সম্পর্কে আপনার পুরোনো ধারণা পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। চলুন, পৃথিবীর গভীরে লুকিয়ে থাকা সেই রহস্যময় জগতের দিকে এক ঝলক উঁকি দেওয়া যাক।
১. আপনি কি জানেন? পৃথিবীর ভূত্বকের প্রধান উপাদান অক্সিজেন!
শুনলে অবাক হবেন যে, আমরা শ্বাস নেওয়ার জন্য যে গ্যাস ব্যবহার করি, সেই অক্সিজেনই আমাদের পায়ের নিচের কঠিন ভূত্বকের সবচেয়ে প্রধান উপাদান। হ্যাঁ, গ্যাসীয় অক্সিজেন নয়, কঠিন পাথরের অক্সিজেন!
ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, পৃথিবীর ভূত্বকের মোট ভরের প্রায় ৪৬.৬% হলো অক্সিজেন। এর পরেই রয়েছে সিলিকন (২৭.৭%), অ্যালুমিনিয়াম (৮.১%) এবং লোহা (৫.০%)। কিন্তু এই অক্সিজেন বায়বীয় অবস্থায় ভেসে থাকে না। এটি সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম এবং অন্যান্য মৌলের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন খনিজ (minerals) তৈরি করে, আর সেই খনিজ দিয়েই গঠিত হয় নানা ধরনের পাথর।
আমরা অক্সিজেনকে সবসময় বাতাসের অদৃশ্য একটি উপাদান হিসেবেই ভেবে এসেছি। অথচ প্রকৃতির কি আশ্চর্য খেলা, এর সবচেয়ে বড় ভান্ডারটি লুকিয়ে আছে আমাদের পায়ের নিচের কঠিন পাথরের মধ্যেই!
২. সাধারণ চুনাপাথরই রূপান্তরিত হয়ে তৈরি করে মহামূল্যবান মার্বেল
পাথর মানেই কি স্থির আর অপরিবর্তনীয়? একদমই না। পৃথিবীর অভ্যন্তরের প্রচণ্ড তাপ এবং চাপের ফলে পাথর তার পুরোনো রূপ পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারে। ভূতত্ত্বের ভাষায় এই বদলে যাওয়া পাথরকে বলা হয় রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock)। এই প্রক্রিয়াটিকে পাথরের এক অসাধারণ "গ্লো-আপ" বা রূপান্তর বলা যেতে পারে।
বিষয়টি বোঝার জন্য কিছু চমৎকার উদাহরণ রয়েছে:
• সাধারণ চুনাপাথর (Limestone) প্রচণ্ড তাপ ও চাপে রূপান্তরিত হয়ে মহামূল্যবান মার্বেল (Marble) পাথরে পরিণত হয়।
• নরম বেলেপাথর (Sandstone) রূপান্তরিত হয়ে পরিণত হয় অত্যন্ত কঠিন কোয়ার্টজাইট (Quartzite)-এ।
• বহুল পরিচিত গ্রানাইট (Granite) পাথর রূপান্তরিত হয়ে তৈরি করে নাইস (Gneiss) নামক একটি নতুন ধরনের শিলা।
এমনকি এই রূপান্তর প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপেও ঘটতে পারে। যেমন, কাদা পাথর (Shale) প্রথমে স্লেট (Slate)-এ রূপান্তরিত হয়, এবং পরবর্তীতে আরও তাপ ও চাপে সেই স্লেট পাথরই আবার ফিলাইট (Phyllite) নামক নতুন শিলাতে পরিণত হয়। এই রূপান্তরের ফলে পাথরগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং সুন্দর কেলাসিত (crystalline) গঠনে সজ্জিত হয়। পৃথিবীর এই সৃজনশীল শক্তি সাধারণ উপাদানকে অসাধারণ সৌন্দর্য ও মূল্যের বস্তুতে পরিণত করে, যা সত্যিই বিস্ময়কর।
৩. আমাদের মহাদেশ ও মহাসাগরের তলদেশ ভিন্ন উপাদানে তৈরি
আমরা যে ভূত্বকের ওপর বাস করি, তা একটিমাত্র স্তর দিয়ে তৈরি নয়। ভূতাত্ত্বিকরা এর রাসায়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন, যা আমাদের গ্রহের পৃষ্ঠের গঠন বুঝতে সাহায্য করে।
এই দুটি স্তর হলো:
• সিয়াল (Sial): এটি ভূত্বকের উপরের হালকা স্তর, যা দিয়ে মূলত আমাদের মহাদেশগুলো গঠিত। মহাদেশীয় এই স্তরটি প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার পুরু। এর নামটি এসেছে এর প্রধান দুটি উপাদান সিলিকন (SIlicon) এবং অ্যালুমিনিয়াম (ALuminium)-এর নামের প্রথম অংশ থেকে।
• সিমা (Sima): এটি সিয়াল স্তরের নিচে অবস্থিত এবং তুলনামূলকভাবে ভারী একটি স্তর। মহাসাগরের তলদেশ মূলত এই স্তরটি দিয়েই তৈরি, যা মাত্র ৫-৭ কিলোমিটার পুরু। এর নামটিও এর প্রধান উপাদান সিলিকন (SIlicon) এবং ম্যাগনেসিয়াম (MAgnesium) থেকে নেওয়া হয়েছে।
সহজ কথায়, আমরা মহাদেশে যে পুরু স্তরটির ওপর দাঁড়িয়ে আছি, তার গঠন আর গভীর সমুদ্রের নিচের পাতলা কিন্তু ভারী স্তরটির গঠন এক নয়। এই সাধারণ পার্থক্যটিই পৃথিবীর পৃষ্ঠের মূল কাঠামো তৈরি করেছে।
৪. অবাক হবেন, পাথরেরও আছে 'আম্লিক' ও 'ক্ষারকীয়' পরিচয়!
রসায়ন ক্লাসের 'অ্যাসিড' আর 'বেস' বা আম্লিক ও ক্ষারকীয় শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ভূতাত্ত্বিকরাও কিছু পাথরকে বর্ণনা করার জন্য এই শব্দগুলো ব্যবহার করেন?
আগ্নেয় শিলা (Igneous Rocks), অর্থাৎ আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে তৈরি পাথরকে তাদের রাসায়নিক গঠনের ওপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:
• আম্লিক (Acidic) শিলা: যে শিলাগুলিতে সিলিকার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, তাদের আম্লিক শিলা বলা হয়। এর সেরা উদাহরণ হলো গ্রানাইট (Granite)
• মধ্যবর্তী (Intermediate) শিলা: এই শিলাগুলিতে ক্ষারকীয় অক্সাইড ও সিলিকা প্রায় সমান পরিমাণে থাকে।
• ক্ষারকীয় (Basic) শিলা: এই শিলাগুলিতে ক্ষারকীয় বা তারকীয় পদার্থের পরিমাণ ৪২%-এর বেশি থাকে। যেমন—ব্যাসল্ট (Basalt)
• অতি ক্ষারকীয় (Ultra basic) শিলা: যখন ক্ষারকীয় পদার্থের পরিমাণ ৫৫%-এর বেশি হয়, তখন তাকে অতি ক্ষারকীয় শিলা বলা হয়, যেমন পেরিডোটাইট (Peridotite)
এই রাসায়নিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে একটি পাথরের ধর্ম এবং গঠন তার ভেতরের মৌলিক রসায়নের ওপর কতটা নির্ভরশীল, ঠিক যেমনটা অন্য যেকোনো পদার্থের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
উপসংহার
আমরা যে মাটির ওপর চলি, তা মোটেই নীরস বা স্থির নয়। এর গভীরে রয়েছে অবাক করা রসায়ন, নাটকীয় রূপান্তর আর সুশৃঙ্খল এক গঠন। অক্সিজেন থেকে মার্বেলের জন্ম, কিংবা মহাদেশ ও মহাসাগরের ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তি—প্রতিটি তথ্যই আমাদের গ্রহের এক একটি অবিশ্বাস্য গল্পের অংশ।
এখন থেকে যখন কোনো পাথর দেখবেন, তখন কি শুধু পাথর হিসেবেই দেখবেন, নাকি এর পেছনের অবিশ্বাস্য গল্পটা ভাববেন?