ভারতীয় সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ: একটি সম্পূর্ণ অধ্যয়ন সহায়িকা
এই অধ্যয়ন সহায়িকাটি ভারতীয় সংবিধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলির একটি বিশদ পর্যালোচনা প্রদানের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এখানে একটি কুইজ, তার উত্তরমালা, প্রবন্ধমূলক প্রশ্ন এবং একটি বিস্তৃত পরিভাষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের সংবিধানের জটিল বিষয়গুলি বুঝতে এবং মনে রাখতে সহায়তা করবে।
--------------------------------------------------------------------------------
কুইজ
নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির প্রতিটির ২-৩টি বাক্যে উত্তর দিন।
১. অনুচ্ছেদ ৩ অনুযায়ী, একটি নতুন রাজ্য গঠন বা বিদ্যমান রাজ্যের সীমানা পরিবর্তন করার জন্য তিনটি প্রধান পদক্ষেপ কী কী?
২. ভারতীয় সংবিধানের কোন অংশে নাগরিকতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং এটি কোন কোন অনুচ্ছেদকে অন্তর্ভুক্ত করে?
৩. অনুচ্ছেদ ২১ এবং ২১ক দ্বারা প্রদত্ত দুটি মৌলিক অধিকার কী কী?
৪. ডঃ বি. আর. আম্বেদকর কোন অনুচ্ছেদকে 'সংবিধানের আত্মা' বলে অভিহিত করেছেন এবং কেন?
৫. রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতির (DPSP) দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন যা অনুচ্ছেদ ৩৭-এ বর্ণিত আছে।
৬. অনুচ্ছেদ ৭২ এবং ১৬১-এর অধীনে যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার মধ্যে মূল পার্থক্য কী?
৭. অনুচ্ছেদ ১০৮ অনুযায়ী সংসদের যৌথ অধিবেশন কে ডাকতে পারেন এবং কখন এটি ডাকা হয়?
৮. ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাগাণনিক (CAG) পদের কথা কোন অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে এবং তার প্রধান কাজ কী?
৯. ৩ ধরনের জরুরি অবস্থার কথা উল্লেখ করুন যা ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত আছে এবং তাদের নিজ নিজ অনুচ্ছেদগুলি কী কী?
১০. সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়াটি কোন অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এই ধারণাটি কোন দেশের সংবিধান থেকে নেওয়া হয়েছে?
--------------------------------------------------------------------------------
উত্তরমালা
১. অনুচ্ছেদ ৩ অনুযায়ী তিনটি প্রধান পদক্ষেপ হলো - নতুন রাজ্য নির্মাণ করা, রাজ্যগুলির সীমানা বাড়ানো বা কমানো, এবং রাজ্যগুলির নাম পরিবর্তন করা। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড এবং তেলেঙ্গানার মতো রাজ্যগুলি এই অনুচ্ছেদের অধীনে গঠিত হয়েছে।
২. ভারতীয় সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে (ভাগ ২) নাগরিকতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এটি অনুচ্ছেদ ৫ থেকে ১১ পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করে, যেখানে সংবিধানের প্রারম্ভে নাগরিকতা, পাকিস্তান থেকে আসা বা সেখানে যাওয়া ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব এবং নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে সংসদের ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় বর্ণিত আছে।
৩. অনুচ্ছেদ ২১ প্রত্যেক ব্যক্তিকে প্রাণ ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার বা মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার প্রদান করে, যার মধ্যে গোপনীয়তার অধিকারও অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে, ৮৬তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যুক্ত হওয়া অনুচ্ছেদ ২১ক, ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিনামূল্যে ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে।
৪. ডঃ বি. আর. আম্বেদকর অনুচ্ছেদ ৩২-কে 'সংবিধানের আত্মা' বলে অভিহিত করেছেন কারণ এটি সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার প্রদান করে। যদি কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়, তবে তিনি এই অনুচ্ছেদের অধীনে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন, যা পাঁচ ধরনের রিট জারি করে অধিকার রক্ষা করে।
৫. অনুচ্ছেদ ৩৭ অনুযায়ী, DPSP-এর দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো - এগুলি আদালত দ্বারা বলবৎযোগ্য নয়, অর্থাৎ এগুলি लागू না হলে কেউ আদালতে যেতে পারে না। দ্বিতীয়ত, যদিও এগুলি বলবৎযোগ্য নয়, তবে দেশের শাসনের জন্য এগুলি মৌলিক এবং আইন প্রণয়নের সময় রাষ্ট্র এগুলি প্রয়োগ করতে দায়বদ্ধ থাকবে।
৬. অনুচ্ছেদ ৭২ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির মৃত্যুদণ্ডসহ যেকোনো দণ্ড সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে, অনুচ্ছেদ ১৬১ অনুযায়ী রাজ্যপালের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা থাকলেও, তিনি মৃত্যুদণ্ড ক্ষমা করতে পারেন না, তবে দণ্ড কমাতে বা স্থগিত করতে পারেন।
৭. অনুচ্ছেদ ১০৮ অনুযায়ী, সংসদের যৌথ অধিবেশন ডাকার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। যখন কোনো সাধারণ বিল নিয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় এবং বিলটি পাশ করা সম্ভব হয় না, তখন রাষ্ট্রপতি এই যৌথ অধিবেশন ডাকতে পারেন।
৮. ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহাগাণনিক (CAG) পদের কথা অনুচ্ছেদ ১৪৮-এ বলা হয়েছে। তার প্রধান কাজ হলো কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমস্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা করা এবং তা নিশ্চিত করা যে সমস্ত লেনদেন আইনসম্মতভাবে হয়েছে।
৯. সংবিধানে ৩ ধরনের জরুরি অবস্থা রয়েছে: ১) জাতীয় জরুরি অবস্থা (অনুচ্ছেদ ৩৫২), যা যুদ্ধ বা বহিরাগত আগ্রাসনের কারণে জারি করা হয়। ২) রাষ্ট্রপতি শাসন (অনুচ্ছেদ ৩৫৬), যা কোনো রাজ্যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে জারি করা হয়। ৩) আর্থিক জরুরি অবস্থা (অনুচ্ছেদ ৩৬০), যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হলে জারি করা হয়।
১০. সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়াটি ভাগ ২০-এর অনুচ্ছেদ ৩৬৮-এ উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধারণাটি দক্ষিণ আফ্রিকার সংবিধান থেকে নেওয়া হয়েছে, যা সংসদকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সংবিধানের যেকোনো অংশ সংশোধন করার ক্ষমতা প্রদান করে।
--------------------------------------------------------------------------------
প্রবন্ধমূলক প্রশ্ন
১. ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলির (ভাগ ৩) গুরুত্ব আলোচনা করুন এবং উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন কীভাবে অনুচ্ছেদ ৩২ এই অধিকারগুলিকে সুরক্ষিত করে।
২. রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি (DPSP) এবং মৌলিক অধিকারের মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য বিশ্লেষণ করুন। দেশের জন্য একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে DPSP-এর ভূমিকা কী?
৩. ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোতে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের সাংবিধানিক ভূমিকা এবং ক্ষমতার তুলনা করুন। তাদের নিয়োগ, কার্যকাল এবং কার্যনির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলি কী কী?
৪. কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে আইনী ক্ষমতার বিভাজন কীভাবে সম্পন্ন হয়? অনুচ্ছেদ ২৪৬-এ উল্লিখিত তিনটি তালিকার (সংঘ তালিকা, রাজ্য তালিকা এবং সমবর্তী তালিকা) বিশদ বিবরণ দিন এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে সংসদ কীভাবে রাজ্য তালিকার বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে তা ব্যাখ্যা করুন।
৫. ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত বিভিন্ন ধরণের জরুরি অবস্থার (অনুচ্ছেদ ৩৫২, ৩৫৬, এবং ৩৬০) বিধানগুলি ব্যাখ্যা করুন। এই বিধানগুলি জারির কারণ কী এবং জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় মৌলিক অধিকারগুলির উপর এর কী প্রভাব পড়ে?
--------------------------------------------------------------------------------
পরিভাষা
পরিভাষা | সংজ্ঞা |
অনুচ্ছেদ (Article) | সংবিধানের একটি নির্দিষ্ট ধারা বা নিয়ম। |
ভাগ (Part) | সংবিধানের একটি অধ্যায়, যেখানে সম্পর্কিত অনুচ্ছেদগুলি একত্রিত থাকে। |
মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights) | সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত নাগরিকদের সেইসব অধিকার যা তাদের মর্যাদা ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য এবং আদালত দ্বারা সুরক্ষিত। |
নাগরিকতা (Citizenship) | কোনো ব্যক্তির একটি দেশের আইনগত সদস্যপদ, যা তাকে নির্দিষ্ট অধিকার ও কর্তব্য প্রদান করে। |
রিট (Writ) | আদালত কর্তৃক জারি করা একটি আনুষ্ঠানিক লিখিত আদেশ, যা কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে একটি নির্দিষ্ট কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। (যেমন - বন্দী প্রত্যকষীকরণ, পরমাদেশ)। |
রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি (DPSP) | সংবিধানের নির্দেশিকা যা রাষ্ট্রকে আইন ও নীতি প্রণয়নের সময় অনুসরণ করতে উৎসাহিত করে, যদিও এগুলি আইনত বাধ্যতামূলক নয়। |
সংসদ (Parliament) | ভারতের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা, যা রাষ্ট্রপতি, লোকসভা এবং রাজ্যসভা নিয়ে গঠিত। |
বিধানমণ্ডল (State Legislature) | রাজ্যের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা, যা রাজ্যপাল এবং এক বা দুটি কক্ষ (বিধানসভা ও বিধান পরিষদ) নিয়ে গঠিত। |
যৌথ অধিবেশন (Joint Sitting) | কোনো বিল নিয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভার মধ্যে মতবিরোধ হলে তা সমাধান করার জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আহূত উভয় কক্ষের একটি সম্মিলিত বৈঠক। |
অধ্যদেশ (Ordinance) | যখন সংসদের অধিবেশন চলে না, তখন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারি করা একটি অস্থায়ী আইন যা সংসদের আইনের মতোই ক্ষমতা রাখে। |
নিয়ন্ত্রক ও মহাগাণনিক (CAG) | ভারতের সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষা করে। |
মহাধিবক্তা (Advocate-General) | রাজ্যের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা, যিনি রাজ্য সরকারকে আইনি পরামর্শ দেন। |
মহাভিয়োগ (Impeachment) | রাষ্ট্রপতিকে তার পদ থেকে অপসারণের জন্য সংসদে পরিচালিত একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। |
সংবিধান সংশোধন (Constitutional Amendment) | সংবিধানের কোনো বিধান পরিবর্তন, সংযোজন বা বাতিল করার প্রক্রিয়া। |
জরুরি অবস্থা (Emergency) | যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ अशांति বা আর্থিক সংকটের মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেশের স্বাভাবিক সাংবিধানিক কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য রাষ্ট্রপতির ঘোষণা। |
একক संक्रमणीय ভোট (Single Transferable Vote) | রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের একটি পদ্ধতি, যেখানে ভোটাররা প্রার্থীদের পছন্দের ক্রমানুসারে ভোট দেন। |
অস্পৃশ্যতা (Untouchability) | জাতিগত বিভেদের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে অচ্ছুৎ বা অপবিত্র মনে করার প্রথা, যা অনুচ্ছেদ ১৭ দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। |

.png)